ফাইল চিত্র।
লকডাউনে স্বাভাবিক জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা হারিয়ে মানুষ এমনিই সঙ্কটে। তার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কায় তিন রাত্তির পার হয়ে গিয়েছে জল, বিদ্যুৎ ছাড়া। এই পরিস্থিতির আগাম আম্দাজ করে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখতে প্রশাসন দক্ষতা দেখাতে পারেনি। উল্টে মুখ্যমন্ত্রী আবার ‘ব্যর্থতা’র মুখে আগ্রাসী মনোভাবকেই ঢাল করতে চাইছেন। ‘আম্পান’ বিপর্যয়ের চার দিনের মাথায় রাজ্যের পরিস্থিতি দেখে ও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে এমনই মনে করছে বিরোধীরা।
বিদ্যুৎ, জল-সহ ন্যূনতম পরিষেবার দাবিতে কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। বহু জায়গায় গাছ কাটার কাজও শুরু হয়নি। ঝড়ের তিন দিন পরে সেনাকে ডাকা হয়েছে। সম্মিলিত সুরে বিরোধীদের বক্তব্য, বিপর্যয় গভীর, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সম্ভাব্য বিপর্যয়ের এলাকা থেকে অনেক মানুষকে সময় মতো নিরাপদে সরিয়েও নিতে পেরেছে সরকার। রাজনৈতিক বিতর্ক সরিয়ে সরকারের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা আগাম দিয়ে রেখেছে সব দলও। তবু ঘটনার পরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো প্রস্তুতি প্রশাসনের তরফে চোখে পড়েনি। আর তার পরে মুখ্যমন্ত্রীই রাজনৈতিক চাপান-উতোরের পথ আরও খুলে দিচ্ছেন।
লোকসভায় বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী যেমন শনিবার বলেছেন, ‘‘আবহাওয়াবিদেরা যা পূর্বানুমান করেছিলেন, তা সম্পূর্ণ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তাঁদের দক্ষতা প্রশংসায় যোগ্য। কিন্তু প্রস্তুতিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার দক্ষতা দেখাতে পারল না। চারিদিকে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা! দিদি আপনি পারলেন না, সাধারণ মানুষ খুব বিপদে পড়ল।’’ গণ-বিক্ষোভের পিছনে সাম্প্রদায়িক ও নানা রকমের উস্কানি আছে বলে যে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তারও কড়া সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস ও সিপিএম নেতারা।
ঝড়ে কলকাতায় অগুনতি গাছ লুটিয়ে পড়ার পরে এখন গাছ কাটার কল কিনতে বলতে হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রশাসন যে প্রস্তুত ছিল না, মানুষের কাছে সেটা ধরা পড়ে যাওয়ার পরে হতাশায় এখন নানা পক্ষের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। সরকারের আগে আমরা বিরোধীরাই কিন্তু জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার দাবি করেছি। কেন্দ্রের কাছে অর্থসাহায্য চেয়েছি। কিন্তু শুধু যাদবপুরেই পঞ্চসায়র, অজয়নগর, বৈষ্ণবঘাটা, বাঘাযতীন, সন্তোষপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় মানুষের যে দুর্দশা, তার দায় কে নেবে?’’ সুজনবাবু আরও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০০৯ সালে ‘আয়লা’র তাণ্ডবের সময়ে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা কলকাতা পুরসভার প্রবল সমালোচনা করেছিলেন, কেন্দ্রের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্যের হাতে টাকা না দেওয়ার জন্য। কারণ, সেই টাকা পুনর্গঠনের কাজে না লাগিয়ে পার্টি তহবিলে যাবে বলে অভিযোগ ছিল তাঁর। বাম ও কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, তাঁরা কিন্তু বিপর্যয়ের সময়ে এমন মনোভাব নেননি।
আরও পড়ুন: শ্রমিকদের সমস্যা আরও ভাল ভাবে মেটানো যেত: নীতি আয়োগ সিইও
বিক্ষোভের খবর দেখানোর জেরে সংবাদমাধ্যমের একাংশের ‘মনোভাব’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যার জেরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রশ্ন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের সবাইকে সব সময়ের জন্য কারও গুণমুগ্ধ হতে হবে কেন? যা দেখা যাচ্ছে, তা তো সত্যি! খাদ্য, জল, বিদ্যুৎ, নেটওয়ার্ক সব অনির্দিষ্ট কাল অচল হয়ে থাকলে চলবে কেন?’’
তবে এই আবহে রাজ্যের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বার্তা দিয়েছেন, সেনার সাহায্য চাওয়া ‘ভাল সিদ্ধান্ত’। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী যে সহযোগিতার মনোভাব দেখিয়েছেন, তার প্রশংসা করে রাজ্যপাল বলেছেন, ‘‘প্রশাসনকে দ্রুত পরিষেবা ঠিক করতে হবে। কিন্তু মানুষের কাছেও আবেদন, এই পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরতে হবে।’’