পাথরপ্রতিমায় ঝড়ের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড ঘর বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
উপকূলে আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিল অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’ (প্রকৃত উচ্চারণ উম পুন)। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, দুপুর আড়াইটে থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পুরোপুরি আছড়ে পড়তে সময় লাগবে আরও চার ঘণ্টা। আমপানের সামনের অংশ ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বকখালি থেকে সাগরের মাঝামাঝি কোনও একটি জায়গায় আমপান আছড়ে পড়বে বলে জানিয়েছন আবহবিদরা।
দুপুর তিনটের সময় সাগরদ্বীপ থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে আমপান। দিঘা থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে। বাংলাদেশের ক্ষেপুপাড়া থেকে ২২৫ কিলোমিটার। বুধবার সকাল থেকে ২২ কিমি বেগে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অভিমুখে স্থলভাগের দিকে এগিয়ে এসেছিল আমপান। কিন্তু এখন প্রতি ঘণ্টায় ২৮ কিমি বেগে এগিয়ে আসছে এই ঘূর্ণিঝড়।
আবহবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পূর্ব মেদিনীপুর এবং দুই ২৪ পরগনায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে। সেই সঙ্গে হবে প্রবল জলোচ্ছ্বাসও। এই তিন জেলার উপকূলে চার থেকে ছ’মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
আমপান আছড়ে পড়ার সময় ঘূর্ণনের গতিবেগ হতে পারে প্রতি ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার। এমনকি, এই গতিবেগ বেড়ে তা পৌঁছতে পারে ১৮৫ কিলোমিটারের আশপাশে। আমপানের ঝাপটায় কলকাতা, হুগলি, হাওড়া এবং নদিয়াতেও বেশ ভালই প্রভাব পড়বে। কলকাতায় ঝড়ের গতিবেগ হতে পারে প্রতি ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এমনকি, তা বেড়ে ১৩০ কিলোমিটারও হতে পারে। সেই সঙ্গে দোসর হবে প্রবল বৃষ্টি।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আমপান আপডেট:
• বিকেল ৪টে নাগাদ: কলকাতায় ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০৫ কিলোমিটার
• দুপুর আড়াইটে থেকে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
• বেলা একটায় দিঘা থেকে ৯৫ কিমি দূরে রয়েছে আমপান। সাগরদ্বীপ থেকে দূরত্ব ৯০ কিমি।
• ঘণ্টায় ২৯ কিমি গতিতে স্থলভাগের দিকে এগিয়ে আসছে আমপান
• বেলা ১২ টায় দিঘা ও সাগরদ্বীপ থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে আমপান
• বেলা ১১ টায় দিঘা থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে ছিল আমপান
• বেলা ১০ টায় দিঘা থেকে ১৭৭ কিলোমিটার দূরে ছিল আমপান
• সকাল ৯ টায় দিঘা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে ছিল আমপান
• সকাল সাড়ে ৭টায় দিঘা থেকে ২২৫ কিলোমিটার দূরে ছিল আমপান
• ওড়িশার জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রপাড়া, ভদ্রক জেলায় ১০০-১১০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইছে।
• নামখানা, বকখালি, কাকদ্বীপ সুন্দরবন এলাকায় হাওয়ার গতি ধীরে ধীরে বাড়ছে। সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসও।
• বালেশ্বরের চাঁদিপুরেও শুরু হয়েছে প্রবল জলোচ্ছ্বাস।
ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে উত্তাল গঙ্গা। ছবি- সোমনাথ মণ্ডল।
আরও পড়ুন: দোকানপাট বন্ধ রাখার পরামর্শ, রাজ্যে সরানো হল ৪ লক্ষাধিক মানুষকে
আরও পড়ুন: বারংবার ত্রাণশিবিরই যেন ওঁদের ভবিতব্য
পারাদ্বীপের অনেকটা কাছেই অবস্থান করছে আমপান। সকাল ৯টা নাগাদ তা আরও ভয়ঙ্কর চেহারা নেবে এবং দিঘার আরও কাছাকাছি চলে আসবে। মঙ্গলবার রাত থেকেই দিঘাতেও শুরু হয়েছে বৃষ্টি। সেই সঙ্গে প্রবল গতিতে হাওয়াও বইছে। তীব্র গতিতে হাওয়া বইছে কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনাতেও। সঙ্গে বৃষ্টিও হচ্ছে। বেলা যত গড়াবে, অতি মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের দাপটও বাড়তে থাকবে।
আরও পড়ুন: দোকানপাট বন্ধ রাখার পরামর্শ, রাজ্যে সরানো হল ৪ লক্ষাধিক মানুষকে
আমপানের মোকাবিলায় রাজ্য সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ইতিমধ্যেই তিন লক্ষ মানুষকে সাইক্লোন সেন্টার-সহ নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএ)-ও উপকূলবর্তী-সহ বিভিন্ন জেলায় প্রস্তুত। নবান্নে চালু রয়েছে কন্ট্রোল রুমও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে নবান্ন উপস্থিত থেকে গোটা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। এবং প্রয়োজনে নির্দেশও দেবেন সেখান থেকে। রাজ্যবাসীর উদ্দেশে আজ সারা দিনই ঘরে থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।