বসিরহাটে মোদীর সঙ্গে মমতা ও জগদীপ ধনখড়। ছবি: পিটিআই।
প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে এলে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে রাজ্যপাল উপস্থিত থাকেন, এটা রীতির মধ্যেই পড়ে। কিন্তু রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় যে এ যাত্রা হেলিকপ্টারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গী হয়ে ‘আম্পানে’র ক্ষয়ক্ষতি দেখতে যাবেন, এমন আগাম খবর রাজ্যের কাছে ছিল না। জানতেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে তাতে সৌজন্যের কোনও অভাব হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি না বসলেও কপ্টারে করোনা-বিধি মেনেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি আসনে বসে আকাশ-সফর করে এলেন রাজ্যপাল ধনখড়।
রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নানা বিষয়ে রাজ্যপালের মতভেদ, বিতর্ক, সংঘাত জারি আছে। লকডাউনের মরসুমেও বারবার করোনা মোকাবিলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীকে পত্রাঘাত করেছেন। পাল্টা কড়া জবাবও এসেছে মমতার তরফে। সর্বশেষ বিবাদ চলছে কলকাতা পুরসভায় প্রশাসকমণ্ডলী বসানো নিয়ে। আর প্রতিটি ঘটনারই ‘রাজনৈতিক লাভ’ তুলতে তৎপর হচ্ছে বিজেপি। রাজনেতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, পরিস্থিতি দেখে মনে হয় যেন বিজেপি এবং রাজ্যপাল পরস্পরের ‘সহায়ক’। এই অবস্থায় মোদীর সঙ্গে ধনখড়ের একই কপ্টারে যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক গুঞ্জন দানা বেঁধেছে। অনেকের সংশয়, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই রাজ্যপালকে ডেকে নেওয়ার পিছনে কি কোনও কৌশল কাজ করেছে? স্বাভাবিক ভাবেই এ সংশয়ের নির্দিষ্ট উত্তর মেলেনি। মেলার কথাও নয়।
তবে সূত্রের খবর, হেলিপ্টারে বা তার আগে পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যপালের নিছক সৌজন্য বিনিময় ছাড়া অন্য কোনও কথা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কপ্টারে তাঁর সচিবালয়ের কয়েক জন অফিসার, নিরাপত্তারক্ষী, এবং ফটোগ্রাফার ছাড়া ছিলেন শুধুই মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল। সেখানেও মোদীর সঙ্গে রাজ্যপালের বিশেষ কথার অবকাশ ছিল না। প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া রুটম্যাপ ধরে ধরে আকাশ থেকে দুর্গত এলাকাগুলি চিহ্নিত করতে। বসিরহাটের বৈঠকে অবশ্য একই সারিতে বসেছিলেন তাঁরা তিন জন। তবে সেখানেও রাজ্যপালের কথা বলার অবকাশ ছিল না।
আরও পড়ুন: হাজার হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, বিদ্যুৎ নেই, বিধ্বস্ত গোবরডাঙা
তার আগে দমদম বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে পরপর হাজির হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল। ভিআইপি লাউঞ্জের এক তলায় প্রধানমন্ত্রীর জন্য বসার ব্যবস্থা ছিল। সেখানে আসন ছিল মুখ্যমন্ত্রীরও। কিন্তু রাজ্যপালকে দেখা যায় নিজের গাড়িতেই অপেক্ষা করতে। প্রধানমন্ত্রীর বিমান তখনও নামেনি। ধনখড়কে গাড়িতে বসে থাকতে দেখে মমতা তাঁকে বাইরে এসে বসতে অনুরোধ করেন এবং দু’টি চেয়ার আনিয়ে নিজেও রাজ্যপালের পাশে বাইরেই বসে মোদীর জন্য অপেক্ষা করেন।
পরে রাজ্যপাল বলেছেন, ‘‘সাম্প্রতিক কালে বাংলায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহতম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে ‘আম্পান’।’’ বিপর্যয়ের প্রাবল্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বিপর্যয় মোকাবিলায় ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে সকলকেই পুনর্গঠনের কাজে উদার মনে দান করার আবেদনও জানিয়েছেন।