আমপান নিয়ে বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
আমপানের জেরে তিন দিন ধরে চলতে থাকা নাগরিক দুর্গতির গুচ্ছগুচ্ছ অভিযোগ ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভ সর্বত্র। সেই প্রসঙ্গেই প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কার্যত আত্মপক্ষ সমর্থনে সওয়াল করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শনিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর মন্তব্য, ‘‘দু’দিনের মধ্যে সব কিছু চাই? সেটা নিয়ে প্ররোচনা, উত্তেজনা ছড়াতে হবে? আমরা সময় পেলাম কখন? আপনারা চাইলে আমার মুন্ডু কেটে নিতে পারেন। জানি, মানুষের খুব দুর্ভোগ হচ্ছে। সে জন্য হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছি। এত বড় দুর্যোগ আগে কখনও হয়নি। তাই বলছি, দয়া করে একটু ধৈর্য ধরুন।’’ নাম না করে বিজেপি-সহ বিরোধীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘এখন ক্ষুদ্র রাজনীতির সময় নয়। সাম্প্রদায়িকতায় এখন সুড়সুড়ি দেবেন না।’’ ২০০৯-এর আয়লার প্রসঙ্গও টেনে এনে তিনি বলেন, ‘‘দুর্যোগ যখন আসে সহ্য করতে হয়। ধৈর্য ধরতে হয়। আয়লার সময় আমি কিন্তু সমালোচনা করিনি।’’
মমতার এই মনোভাবের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস। সকলেরই মূল বক্তব্য, দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থ। কারণ, প্রস্তুতি বা পরিকল্পনা কোনওটাই সুষ্ঠু ছিল না। তাই বিরোধীরা মনে করেন, খামতি ঢাকার জন্য মুখ্যমন্ত্রী এখন ‘আক্রমণাত্মক’ পথে গিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছেন।
কী ভাবে এই বিপর্যয়ের মোকাবিলা করা হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘আমপান আসার আগে অন্তত ৩ লক্ষ লোককে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়েছিল। নইলে জীবনহানি আরও বাড়তে পারত।’’ তাঁর দাবি, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে সবাই দিনরাত জেগে কাজ করছি। যাঁরা রাস্তা পরিষ্কার বা অন্য কাজে যুক্ত, তাঁরাও ২৪ ঘণ্টা কাজ করে চলেছেন। আমাদের এক হাজার টিম কাজ করছে। তাঁরাও তো মানুষ।’’ এই সূত্রেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘পাড়ার ছেলেরা পর্যন্ত নেমে পড়েছে। পুলিশ লকডাউন সামলাবে, না সাইক্লোন সামলাবে? এই চাপও সকলের মনে রাখতে হবে। জেলায় মানুষ আরও কষ্টের মধ্যে রয়েছেন।’’
আরও পড়ুন: পরিষেবা নিয়ে ‘বঞ্চনা’, ক্ষুব্ধ সংযুক্ত এলাকার বাসিন্দারা
বুধবার ঝড়ের পর থেকে আলোহীন যে বিরাট সংখ্যক মানুষ শনিবার রাত পর্যন্তও কোনও সুরাহা পাননি, তার দায়ও মুখ্যমন্ত্রী অনেকটা চাপিয়ে দেন সিইএসসি’র উপর। তাঁর কথা, ‘‘বৃহস্পতিবার থেকে আমি নিজে কথাবার্তা চালাচ্ছি। সঞ্জীব গোয়েন্কার সঙ্গে নিজে কথা বলেছি। কাজের লোক কম হয়ে গিয়েছে। করোনার কারণে অনেকে ছুটিতে। আর ২০-৩০ % লোক নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তবে বলেছি, কোনও কথা শুনতে চাই না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরাতে হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, এ দিন সিইএসসিকে ১৫০ জেনারেটর ভাড়া করে সাময়িক ভাবে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে পরামর্শ দিয়েছেন। যাতে বিদ্যুৎহীন বিভিন্ন জায়গায় মানুষের জন্য কিছুটা জল, আলোর ব্যবস্থা করা যায়।
দুর্গত নাগরিকদের ক্ষোভের কথা কেন প্রচারে আসছে, তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমকেও কাঠগড়ায় তোলেন মমতা। বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে কি একটু ইতিবাচক ভূমিকা, সহযোগিতা আশা করতে পারি না? আপনাদেরও মানুষের পাশে থাকার দায়বদ্ধতা আছে। কোথায় অবরোধ হচ্ছে, তার ছবি দেখাচ্ছেন, খবর দিচ্ছেন। এতে কি টিআরপি পাবেন? প্রচার বাড়বে? মানুষ তো বিদ্যুতের জন্য টিভি-ই দেখতে পারছেন না। আমার বাড়িতেও টিভি দেখা যাচ্ছে না। ইন্টারনেটও নেই।’’ মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘আপনারা বিক্ষোভের খবর দেখাচ্ছেন। পুনর্গঠনের কাজের কথা প্রচার করলে আরও কিছু মানুষ উৎসাহিত হতে পারেন।’’ তিনি বলেন, প্রচার মাধ্যমের একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মনোভাব পোষণ করেন। মমতার কথায়, ‘‘ওঁরা পলিটিক্যাল মাইন্ডেড।’’