পুনর্গঠন: গোসাবার পুঁইজালিতে চলছে নদী-বাঁধে মাটি দেওয়ার কাজ। শুক্রবার। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা
আমপানের প্রভাবে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির কথা আগেই বলেছিল রাজ্য সরকার। শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, সামাজিক পেনশন, পরিকাঠামো মেরামত-সহ একাধিক কাজে প্রাথমিক ভাবে ৬২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করল রাজ্য। বৈষ্যমহীন ভাবে বিতরণের স্বার্থে ত্রাণ সামগ্রী সরকারের হাতে তুলে দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টির উদ্দেশে আর্জি জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আমপান-প্রভাবে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা ৮৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৮। বিস্তীর্ণ এলাকার ক্ষত মেরামত-সহ ত্রাণের বিপুল কাজ করতে হচ্ছে রাজ্যকে। রাজ্যের প্রাথমিক ১০০০ কোটি এবং কেন্দ্রের অগ্রিম ১০০০ কোটি টাকার পরেও ত্রাণ, পুনর্গঠন এবং ক্ষতিপূরণ খাতে অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যেই এ দিন এই টাকা বরাদ্দ করল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, রাজ্যের আয় এমনিতেই এখন নেই। তার উপরে বিপুল খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে। ফলে সকলের কাছে ত্রাণের জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। বৈষম্য এড়াতে কেন্দ্রীয় ভাবে প্রত্যেককে ত্রাণসামগ্রী দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে সরকার। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘এক জায়গা থেকে ত্রাণ বিলি করা হলে প্রত্যেকের কাছে প্রয়োজন মতো তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।’’
প্রাথমিক ভাবে এ দিন দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া এবং পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে অর্থ পৌঁছে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: সরকারি, বেসরকারি বাসে যত আসন, তত যাত্রী: মমতা
আরও পড়ুন: সোমবার থেকে রাজ্য়ে কী কী খুলছে? জানালেন মমতা
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ছ’টি জেলায় ৮০ শতাংশ বিদ্যুতের কাজ হয়ে গিয়েছে। ১০টা জেলায় ১০০ শতাংশ কাজ শেষ। বাকি কয়েকটি এলাকায় দ্রুত কাজ শেষ করা যাবে। বাড়ি বাড়ি সংযোগের নিরিখে ৮৮ লক্ষের মধ্যে ৭০ লক্ষ গ্রাহক বিদ্যুৎ পেয়ে গিয়েছেন। বাকিরাও দ্রুত পেয়ে যাবেন।
কোন খাতে কী বরাদ্দ
• প্রাথমিক ৫ লক্ষ পরিবারের বাড়ির ক্ষতি বাবদ ২০,০০০ করে টাকা • অতিরিক্ত, একশো দিনের কাজের মজুরি নিশ্চিতকরণে ২৮,০০০ করে টাকা • পরে আরও
৫ লক্ষ ক্ষতিগ্রস্তের ব্যবস্থা • ২০ লক্ষ কৃষককে ১৫০০ করে টাকা, মোট বরাদ্দ ৩০০ কোটি • পানের বরজ বাবদ ২০০ কোটি • ১ লক্ষ ক্ষতিগ্রস্তকে ৫০০০ করে টাকা • অতিরিক্ত, একশো দিনের কাজের মজুরি নিশ্চিতকরণে ১৫,০০০ করে টাকা
• টিউবওয়েল বসানো ২৫০ কোটি • সেচ বাঁধ মেরামত ২০০ কোটি • পূর্ত-রাস্তা মেরামত ১০০ কোটি
• গ্রামীণ রাস্তা মেরামত ১০০ কোটি • স্কুল মেরামত ১০০ কোটি • প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন ১০০ কোটি • মৎস্য ১০০ কোটি • উদ্যানপালন ১০০ কোটি • কৃষকবন্ধু প্রকল্প ৮০০ কোটি • ৫০ লক্ষ উপভোক্তার জয়বাংলা প্রকল্পে ১০০০ কোটি। তাতে জুন-জুলাইয়ে সামাজিক পেনশন মাথাপিছু ২০০০ টাকা।
রাজ্য সরকারের দাবি, ইতিমধ্যেই ৪০০টি সেতু মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। রাজ্য সড়ক, জেলা সড়ক পরিষ্কার করার কাজ শেষ। ২০ হাজার পানের বরজ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ছ’হাজার পুকুর পরিষ্কার করছে প্রশাসন। ১ জুন থেকে নোনা জল প্লাবিত এলাকায় টিউবওয়েলের কাজ শুরু হবে। একই সঙ্গে ১০ লক্ষ ম্যানগ্রোভ লাগানোর পরিকল্পনা করেছে রাজ্য। আমপান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে রাজ্যের পাশে দাঁড়িয়ে ৫০ লক্ষ টাকা অর্থসাহায্য করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। অর্থ সাহায্য করেছেন প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধীও। দু’জনকেই এ দিন কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজভবনে গিয়ে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ রাজ্যপালকে করোনা, আমপান ও পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিস্থিতি নিয়ে বিশদে জানিয়েছেন।