বাজারে ভাল মানের আম অমিল।
আমপানের দাপটে এ বার বাঙালির পাতে ফলের রাজা আমের দেখা তেমন পাওয়া যাবে না বলেই বাজারের ছবি বলছে। যে সব জেলায় আমের বেশি ফলন হয়, সেই সব জেলায় তার প্রায় পুরোটাই ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফলে বাজারে ভাল মানের আম অমিল। যেটুকু রয়েছে, তার দাম আকাশছোঁয়া। আমচাষিদের বেশিরভাগই জানাচ্ছেন, ভিন্ রাজ্যের আমের উপরেই এ বার নির্ভর করতে হবে।
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট, বাদুড়িয়া, স্বরূপনগর এলাকার বড় বড় আমবাগান প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। এ বার হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, বোম্বাই-সহ একাধিক প্রজাতির আমের ফলন ভাল হওয়ায় খুশি হয়েছিলেন আমচাষিরা। আম ব্যবসায়ী স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘কালবৈশাখীর জন্য আমাদের এলাকায় আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। তার পরে লকডাউন। এর পর আমপানে ৭০ শতাংশ আম গাছ ভেঙে পড়েছে।’’ অন্য বার এ সময়ে বসিরহাটে পাকা আমের কিলো ৩০-৪০ টাকায় মেলে। এ বার তা ১৮০-১৯০ টাকাতেও মেলা দায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হিমসাগর, গোলাপখাস, বোম্বাই, আম্রপালি, ল্যাংড়ার চাষ হয়। সেই ফলনও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই পরিস্থিতি হুগলি জেলাতেও। এই জেলার অন্যতম ‘সরি’ আমের ফলনও আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মালদহে মোট ৩০,৫০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। জেলায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার আমের ব্যবসা হয়। আম চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে লক্ষাধিক মানুষ নির্ভরশীল। এ বার জেলায় ৩.২০ লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ঝড়, শিলাবৃষ্টিতে ৬০ হাজার মেট্রিক টন আমের ক্ষতি আগেই হয়ে গিয়েছিল। এ বার আমপানে ক্ষতি হয়েছে আরও ৩৮ হাজার মেট্রিক টন আমের। তা ছাড়া লকডাউনে শ্রমিক না মেলায় পরিচর্যার অভাবে শুলি পোকার আক্রমণেও ক্ষতি হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন চাষিরা। এ বার মালদহের আম অন্য জেলায় পাঠানো যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহে আমচাষিরা। এর আগে আমের ক্ষেত্রে ‘অফ ইয়ার, অন ইয়ার’ ছিল। অর্থাৎ এক বছর ভাল ফলন হলে পরের বছর কম হয়। এমনটাই আম চাষের ক্ষেত্রে বলা হয়। মালদহের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছর ধরে এই ব্যাপারটা আর নেই। প্রতি বছরই কমবেশি ভাল ফলন হয়। কারণ, আম গাছের পরিচর্যাতে বেশ কিছু বদল এনেছেন এলাকার চাষিরা।
আরও পড়ুন: দাঙ্গাহাঙ্গামা নিয়ে অমিতকে পাল্টা বিঁধলেন অভিষেক
আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত আরও ৮০০০, সতর্ক করলেন মোদীও
মুর্শিদাবাদ জেলা উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় ২১০০০ হেক্টর আমের বাগান রয়েছে, লিচুর বাগান রয়েছে ৩৮০০হেক্টর জমিতে। আম, লিচু-সহ অন্য বাগিচা ফসল মিলিয়ে রয়েছে প্রায় ৩২০০০ হেক্টর। আমপানে আম লিচুসহ অন্য বাগিচা ফসলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ২৫০ হেক্টর জমির। মুর্শিদাবাদের উদ্যান পালন দফতরের উপঅধিকর্তা প্রভাস মণ্ডল বলেন, ‘‘এ বার ঝড়ে আম-লিচুর ক্ষতি হয়েছে মারাত্মক। এছাড়া লকডাউনের জেরে ভিন রাজ্যে লিচু না যেতে পারায় তারও প্রভাব পড়েছে।’’
রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, বেশিরভাগ জেলাতে ফোন সংযোগ ঠিক হয়নি। ফলে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে এখনও। সব তথ্য পেলে তবেই ফলের মোট ক্ষয়ক্ষতি বোঝা যাবে।