ছবি: পিটিআই।
একেবারে যেন ত্র্যহস্পর্শ!
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার মধ্যেই লকডাউনে নানা ছাড় কার্যকরী হতে চলেছে। ভিন্ রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিক ও অন্যান্য মানুষকে নিয়ে ফিরছে ট্রেন। যার ফলে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আবার এই সঙ্কটের মধ্যেই ধেয়ে আসছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তিন রকম সঙ্কটের এই ঘনঘটা আগামী কয়েক দিনে শক্ত পরীক্ষার মুখে ফেলতে চলেছে রাজ্য প্রশাসনকে।
কড়া চ্যালেঞ্জের মেঘ যে ঘনিয়ে আসছে, তা বুঝতে পারছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি নিজেই সোমবার বলেছেন, ‘‘কোভিড, পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি পৌঁছনো এবং ঘূর্ণিঝড়— তিনটে ইমার্জেন্সি বিষয়। দেখা যাক কে শক্তিশালী! কিন্তু আমি মনে করি, মানুষ সব চেয়ে বেশি শক্তিশালী। মানুষের আর্শীর্বাদে আমরা জিতব আশা করি।’’ গোটা পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকার সম্ভাব্য সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: ‘অসৌজন্য’ হচ্ছে, ফের অমিত শাহকে তোপ মমতার
আরও পড়ুন: যাতায়াত সহজ না হলে দোকানপাট খুলে হবেটা কি
প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেরই মত, রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হলে বা ভিন্ রাজ্য থেকে মানুষকে ফেরাতে সমস্যা হলে স্বাভাবিক নিয়মেই কাঠগড়ায় উঠতে হবে রাজ্য সরকারকে। আবার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়-ক্ষতি বেশি হলেও সরকারের উপরে চাপ বাড়বে। একই সঙ্গে এতগুলো দিক সামাল দেওয়া যথেষ্টই কঠিন। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘রাজ্য হাত গুটিয়ে বসে নেই। কিন্তু পরিস্থিতি রাজ্যের নিয়ন্ত্রণেও নেই। এই স্পর্শকাতরতা সবাই বুঝলে ভাল!’’
দুর্যোগের ভ্রূকুটি দেখা দিতেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সরকারের কাছে আগাম কিছু দাবি জানিয়ে রাখতে শুরু করেছে। তবে তাদের সকলেরই বক্তব্য, দুর্যোগের সময়ে তারা রাজনীতি চায় না। তারা শুধু চায়, সরকার সতর্ক ও প্রস্তুত থাকুক। ডিওয়াইএফআই যেমন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে লিখিত দাবি করেছে, পরিযায়ী শ্রমিকেরা এমনিতেই বিপন্ন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে তাঁদের নিরাপত্তার দিকে সরকারকে নজর রাখতে হবে। বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ বলেছেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ আসার আগে মাইকে মৎস্যজীবী-সহ সব মানুষকে আমরা সতর্ক করব। আমাদের দলের তরফে তথ্য নিয়ে প্রতিনিয়ত কেন্দ্রকে ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে অবহিত করব, যাতে তাদের সহযোগিতা পাওয়া যায়। আমরা ‘আম্পান’ নিয়ে রাজ্য সরকারকেও সব রকম সহযোগিতা করতে তৈরি।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আয়লা ও ‘বুলবুল’ ঘূর্ণিঝড়ে ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত নদীবাঁধগুলোর দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন এসইউসি-র প্রাক্তন বিধায়ক তরুণ নস্কর।
এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর ফের আবেদন, কোনও বিষয়েই কেউ যেন এখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার চেষ্টা না করেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাইরে থেকে পরিযায়ী শ্রমিকেরাও আসছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে বলব সহযোগিতা করতে। কাউকে যেন উস্কানি দেওয়া না হয়। ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা অনেকে করছেন। সে সব বন্ধ করতে বলব।’’