উপকূল থেকে সরানো হচ্ছে বাসিন্দাদের। পাশে রাজ্য পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কতটা মারাত্মক হবে, জানা নেই। তবে যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত। আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী বিশদে জানালেন, সুপার সাইক্লোন আমপানের মোকাবিলায় সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে যে কথা হয়েছে, তা-ও জানালেন। ঝড়ের তাণ্ডবের হাত থেকে বাঁচতে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, সে কথাও মনে করিয়ে দিলেন বার বার।
পশ্চিমবঙ্গের ৭টি জেলায় আমপান তাণ্ডব চালাতে পারে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া দফতর। পূর্বাভাস জানার পর থেকেই সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে এবং জেলায় জেলায় মাইক প্রচার চালিয়ে জনগণকে সতর্ক করা শুরু করেছিল প্রশাসন। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী নিজেও মনে করিয়ে দিলেন, কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা মেনে চলা জরুরি। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে বারণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কাঁচা বাড়ি বা দুর্বল বাড়ি যে ঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, সে কথা মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মনে করিয়ে দিয়েছেন। যাঁদের বাড়ি কাঁচা বা দুর্বল, ঝড় আসার আগে তাঁদের সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে বা অন্য কোনও নিরাপদ বাড়িতে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে বাংলাদেশের হাতিয়া-র মধ্যবর্তী কোনও অঞ্চলের উপরে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড়। কিন্তু দুর্যোগের আবহ আজ থেকেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকায় ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া, কলকাতা এবং দুই চব্বিশ পরগনার অন্যান্য এলাকাতেও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাই বুধবার কোনও রকম ঝুঁকি না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝড় বিকেলের পরে আসবে বলে তার আগে পর্যন্ত সব কাজকর্ম স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারে, এমনটা যে ভেবে নেওয়া উচিত নয়, সে বার্তা এ দিন স্পষ্ট ছিল মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনে। কাল কেউ বাড়ি থেকে বেরবেন না, পরামর্শ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বুধবার ঝড় থেমে যাওয়ার পরেও বাড়ি বা আশ্রয়স্থল থেকে না বেরনোর পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সাইক্লোনের মাথাটা ঝাপটা মেরে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও অনেক ক্ষেত্রে ফের ঝড় ওঠে বলে তিনি সতর্ক করেছেন। সেই লেজের ঝাপটা থেকে সতর্ক থাকতে বৃহস্পতিবার সকালের আগে বাইরে না বেরনোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: লাইভ: দিঘা থেকে ৫৭০ কিমি দূরে আমপান, ঝোড়ো হাওয়া উপকূলে
এক দিকে করোনা সংক্রমণের বিপদ, তার মাঝেই আবার এত বড় সুপার সাইক্লোন। পরিস্থিতি নিয়ে যে রাজ্য সরকার উদ্বিগ্ন, তা মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনেই স্পষ্ট। করোনার মাঝে এই ঘূর্ণিঝড়কে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলে বর্ণনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুই চব্বিশ পরগনার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ে কী হবে, কেউ জানে না। অনেকে বলছেন, আয়লার চেয়েও ভয়ঙ্কর হবে।’’
তবে জনসাধারাণকে সতর্ক করার পাশাপাশি আতঙ্কিত না হওয়ার বার্তাও দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিস্থিতির মোকাবিলা এবং তার প্রস্তুতির বিষয়ে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। বিপর্যয় মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই এনডিআরএফ মোতায়েন হয়েছে বলেও জানান তিনি। অন্তত ৩ লক্ষ লোককে ইতিমধ্যেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং উত্তর চব্বিশ পরগনাতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: আমপান আছড়াবে সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে, তাণ্ডব চালাবে ৭ জেলায়
তবে এই পরিস্থিতিতে যে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং-এর প্রয়োজনীয়তা ভুলে গেলে চলবে না, সে কথাও মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মনে করিয়ে দেন। নিরাপদ আশ্রয়ে বা ত্রাণ শিবিরে যাঁরা আশ্রয় নিচ্ছেন, তাঁদেরকেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই থাকতে হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন।