ভেঙে পরা বিদ্যুতের খুঁটি সরাচ্ছে সেনাবাহিনী।—ছবি পিটিআই.
আমপানের ধাক্কার আট দিন পর খাস কলকাতায় প্রায় সব এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরলেও কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। বুধবার সন্ধ্যায় ফের ঝড়ের ধাক্কায় বিগড়ে যাওয়া লাইন মেরামতির কাজ আরও জটিল হয়ে ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন জানান, সিইএসসি-র ৩৩ লক্ষ গ্রাহকের মধ্যে ৩০ হাজারের কাছে এখনও বিদ্যুৎ ফেরেনি বলে তাঁর কাছে খবর গিয়েছে।
শুধু কলকাতাতেই নয়, পূর্ব মেদিনীপুরে কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লক এবং এগরাতেও বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভ হয়। এ দিন নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে আমপান-পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম সিইএসসি-র থেকে ভাল কাজ করেছে। নিগমের এলাকায় ১০৩টি পুরএলাকার মধ্যে ১০০টিতেই বিদ্যুৎ ফিরেছে। কলকাতায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সিইএসসি-র ‘বিলম্বের’ জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন তিনি। বলেন, ‘‘সিইএসসি-র দেরির জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’’ এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী নিজে সিইএসসি-র একাধিপত্য নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘সিইএসসি আমাদের পরিচিত সংস্থা নয়। ৩০-৪০ বছর ধরে কলকাতায় চলছে। সময় যখন আসবে, বিস্তারিত আলোচনা করব। বিকল্প তৈরি না-করে সবটা বাদ দিলে কারেন্টটাই কেউ পাবেন না। এটাও ভাবতে হবে।’’ সেই সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগসংক্রান্ত খবর প্রচার নিয়ে এবিপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আমায় আপনারা দু’টো দিন সময় দিলেন না!’’
সিইএসসি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট (ডিস্ট্রিবিউশন) অভিজিৎ ঘোষ এ দিন জানান, ৯৯% গ্রাহকের কাছেই বিদ্যুৎ ফিরছে। শীঘ্রই বাকিটাও ছন্দে ফিরবে। তবে কলকাতায় অস্থায়ী বিদ্যুৎ সংযোগের জোড়াতালিতে যাঁরা আলো ফিরে পেয়েছেন, তাঁরা ধন্দে, ঘরে আলো জ্বললেও পাম্প বা ফ্রিজ ব্যবহার করা যাবে কি না! কলকাতায় প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের জিতে আসা ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডই কার্যত অনাথ দশায়। পর্ণশ্রীর সূর্য সঙ্ঘ ক্লাব বা গোপাল কাননের আশপাশ জুড়ে অন্তত ৩২০টি পরিবার এখনও অন্ধকারে। আমপান ঘা মারার আট দিনের মাথায়, বিকেলে তাঁরা প্রথম বার সিইএসসি-র কর্মীদের দেখা পেয়েছেন। তবে সন্ধ্যার ঝড়বৃষ্টিতে লাইন সারাইয়ের কাজ থমকে যায়।
পর্ণশ্রীতে প্রবীণ ক্যানসার রোগী অনুপকুমার নাথের বাড়ির গায়ে এখনও হেলে প্রকাণ্ড অর্জুন গাছ। জল পেতে অনেক পরিবারকেই জেনারেটরের মোটা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। দক্ষিণ শহরতলির নিউ গড়িয়া, শ্রীনগর, জোকার ডায়মন্ড পার্ক আবাসনের একাংশ থেকে সরশুনা কলেজের কাছে ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকাতেও বাসিন্দারা দুর্দশায়। মহেশতলার এক সিইএসসি-কর্মী বললেন, দিনভর পুলিশ-পাহারায় কাজ করতে হচ্ছে। লোকের দুর্ভোগ কমাতেই নতুন খুঁটির বদলে অস্থায়ী সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। সিইএসসি-র আর এক কর্তার কথায়, ‘‘অস্থায়ী বিদ্যুৎ সংযোগের লোড নিয়েও সতর্কতা জরুরি। একটি উৎস থেকে প্রায় দ্বিগুণসংখ্যক বাসিন্দার বাড়িতে বিদ্যুৎসংযোগ দিতে হচ্ছে। এই অবস্থায় এসি চালালে বিপদ।’’