বিধ্বস্ত: ঝড়ে ভেঙেছে ঘর। জিনিসপত্র উদ্ধারের চেষ্টা। গোসাবার মসজিদবাটি এলাকায়। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা,
এগারো বছর আগে এসেছিল আয়লা। তার জেরে গত পাঁচ বছর ধরে দুই ২৪ পরগনায় ১৮৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষের মুখে। সেচ দফতরের মুখে মুখে আয়লা তহবিলের টাকায় তৈরি ৪০ মিটার ভিতের প্রকাণ্ড বাঁধ ‘হাতিবাঁধ’ নামে পরিচিত হয়ে গিয়েছে। আমপানের দাপটে কোথাও হাতি বাঁধের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে সেচ দফতরের খবর। তবে এ বারও বাঁচেনি সুন্দরবনের নদী বাঁধ। সেচ দফতর জানাচ্ছে, আমপানের ধাক্কায় ৭১টি স্থানে বাঁধ ভেঙেছে। ২৮ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। আরও অন্তত ৭৬ কিলোমিটার বাঁধে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৫০০ কোটি টাকা।
সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘২৮ কিলোমিটার বাঁধ পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে। আর ৭৬ কিলোমিটার বাঁধে আংশিক ক্ষতি হয়েছে। বিস্তারিত ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নেওয়া হচ্ছে। মোট ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা। আশু মেরামতের জন্য ২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।’’
সেচ দফতর সূত্রের খবর, সবচেয়ে বেশি বাঁধে ফাটল বা ভাঙন দেখা দিয়েছে হিঞ্জলগঞ্জ ও সন্দেশখালি(২) ব্লকে। এ ছাড়া কুলতলি, গোসাবা, মথুরাপুর, বাসন্তীতেও বেশ কিছু স্থানে নদীবাঁধ ভেঙেছে। যে ব্লকগুলিতে বাঁধে ফাটল বা ভাঙন বেশি সেখানেই আবার বাঁধ টপকে জল উপচে এসেছে। বহু গ্রামে জল ঢুকেছে। আংশিক ভাবেও দুই ২৪ পরগনাতে সবচেয়ে বেশি বাঁধ ভেঙেছে। পূর্ব মেদিনীপুরে অবশ্য নদী ও সমুদ্রবাঁধ রক্ষা পেয়েছে। দিঘার উপকূল রক্ষা পাওয়ায় স্বস্তি সেচ দফতরে।
তবে কর্তারা জানাচ্ছেন, প্রাথমিক যে হিসাব পাওয়া যাচ্ছে আমপানের গতি এবং তেজ অনেক বেশি হলেও আয়লার মতো ধ্বংস করতে পারেনি। আয়লার সময় ১৭৭ কিলোমিটার বাঁধ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে ৭৭৮ কিলোমিটার বাঁধে আংশিক ক্ষতি হয়েছিল। কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের হিসাবে বাঁধের ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৫০০০ কোটি টাকা।
কেন আমপান ক্ষতি করতে পারল না? সেচ কর্তারা জানাচ্ছেন, এ বারের ঝড়ের সময় ছিল ভাটা ফলে জলোচ্ছ্বাস ততটা হয়নি। হাতি বাঁধ নদীর পাড়ে ৫.৮ মিটার এবং সমুদ্রে পাড়ে ৭.২ মিটার উঁচু করা হয়েছে। ফলে যেখানে আয়লার পর বাঁধ নির্মাণ হয়েছে ,সেখানে বিশেষ ক্ষতি হয়নি। যদি আয়লা পরবর্তী আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলিও এত দিনে মেরামত করা যেত, তা হলে হয়তো এ বারও ১০০ কিমি বাঁধের ক্ষতি হত না বলে সেচ কর্তারা জানাচ্ছেন।