ভাঙা ঘর সারিয়ে নিয়েছেন বিজন হালদার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
আমপানে রক্ষে ছিল না। দোসর হয়েছিল কালবৈশাখী। সাত দিনের ব্যবধানে জোড়া ঝাপটায় ঘরবাড়ি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছিলেন বাগদার যুবক বিজন ওরফে ভোলা হালদার। তবে ভেঙে না পড়ে অদম্য মনের জোরে নিজের চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। আগের থেকে চেয়ে বেড়েছে আয়ও।
বাগদার আশ্রমপাড়া এলাকায় হেলেঞ্চা-বয়রা সড়কের পাশে টিনের বাড়ি বিজনদের। হাটে হাটে ঘুরে চা বিক্রি করে সংসার চলত তাঁর। ২০ মে আমপানে ঘর সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছিল। উড়ে গিয়েছিল টিন। ভেঙেচুরে, দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল ঘরের আসবাবপত্র। পঞ্চায়েত থেকে ত্রিপল পেয়েছিলেন। ভিটেমাটির উপর ত্রিপল বেঁধে মা এবং অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে মাথা গুঁজেছিলেন। এখানেই শেষ নয়, আমপানের ঠিক এক সপ্তাহ পর ২৭ মে সন্ধ্যায় ভয়ঙ্কর কালবৈশাখী আছড়ে পড়ে বাগদায়। ছিড়ে যায় ত্রিপল। খাট ভেঙে চৌচির হয়ে যায়। রান্নার জিনিসপত্র ভেঙে যায়। সে দিনটার কথা এখনও ভুলতে পারেন না বিজন। তিনি জানালেন, কালবৈশাখীর সন্ধ্যায় ঘরেই ছিলেন পরিবারের সদস্যেরা। ঝড়ে ত্রিপল উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেখে স্ত্রী-সহ বাকিদের নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে শুরু করেন বিজন। প্রতিবেশীর এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নেন।
জোড়া ধাক্কায় বিপর্যস্ত জীবন। আক্ষরিক অর্থেই পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়ানো। কিন্তু ভেঙে পড়লে তো চলবে না। ধীরে ধীরে মনকে শক্ত করেন বিজন। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই। পরিচিত কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা ধার নেন। বাঁশ, টিন কিনে নতুন করে ঘর বাঁধেন। বাড়ির মধ্যেই সড়কের পাশে মুদিখানা দোকান খোলেন। শুরু হয় নতুন করে পথচলা। পরবর্তী সময়ে আমপানে ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকারি ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন। দোকানে বেশি করে মালপত্র তুলেছেন। এখন সপ্তাহে চারদিন হাটে হাটে ঘুরে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চায়ের দোকান দেন। বাকি সময় মুদির দোকান চালাচ্ছেন। একটি পুরনো ভ্যান কিনে সময় সুযোগ পেলে মালপত্র বহন করেন। কিছু ধার শোধ হয়েছে। প্রত্যয়ী বিজন জানালেন। বাকি যা ধার রয়েছে, তা-ও শোধ হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি।
আরও পড়ুন: চূড়ান্ত নাটক! মঞ্চে উঠেও গেরুয়া পতাকা নিলেন না কেঁদে ভাসানো সেই নেতা
আরও পড়ুন: ‘জঙ্গলমহলে অত্যাচারকারী লাল পার্টিটাই গেরুয়া হয়েছে’, আক্রমণে আদিবাসী নেতা
জীবন কখনও গল্পকেও হার মানায়। স্থানীয় বাসিন্দা দীনবন্ধু হীরা বলেন, ‘‘আমপান কালবৈশাখী ঝড়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার পরও ভোলা যেভাবে নিজের চেষ্টায় উঠে দাঁড়িয়েছে তা দৃষ্টান্ত। সরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় না থেকে ভোলা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।’’ বিজন বলছেন, ‘‘আমপান আর কালবৈশাখীর পর মনে হয়েছিল এভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। সাহস করে নেমে পড়ি। মনে হয়েছিল, চেষ্টা করে দেখি। বিকল্প কোনও উপায়ও ছিল না। এখন আগের থেকে উপার্জন বেশি করছি।’’ তাঁর এই লড়াইয়ে বিজন পাশে পেয়েছেন স্ত্রী আর মাকে। আর এখন তো পরিবারে এসেছে নতুন সদস্য। কাজ থেকে বাড়ি ফিরলে সাত মাসের ছেলে বাবার কোলে ওঠার জেদ ধরে। স্নেহ চোয়াল শক্ত করে বিজনের।