Cyclone Amphan

ভুয়ো মৎস্যজীবীর খোঁজে বঞ্চিত প্রকৃতরা 

উপকূলবর্তী এই জেলায় আমপানের ধাক্কায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন বহু মৎস্যজীবী পরিবার।

Advertisement

কেশব মান্না

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০ ০৫:৩৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

আমপানে ভাঙা বাড়ির ক্ষতিপূরণ বিলিতে দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূল। দিকে দিকে এখন টাকা ফেরানো, দলের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া চলছে। তারই মধ্যে আবার উঠেছে ভুয়ো মৎস্যজীবীদের ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ। ঘটনাস্থল পূর্ব মেদিনীপুর।

Advertisement

উপকূলবর্তী এই জেলায় আমপানের ধাক্কায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন বহু মৎস্যজীবী পরিবার। কারও বাড়ি ভেঙেছে, কেউ আবার নৌকা ও জাল তছনছ হওয়ায় বিপদে পড়েছেন। অভিযোগ, মাছ ধরার পেশার সঙ্গে যুক্তই নন এমন কয়েক হাজার মানুষও ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করেছেন। বাদ পড়েছেন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা। অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ব্লকস্তরে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

নিয়ম মোতাবেক বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকা, আর নৌকা, জাল ইত্যাদি সরঞ্জাম সারানোর জন্য আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের ৫ হাজার টাকা এবং সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা। মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, ২০মে আমপানের ঝাপটায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবীদের তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছিল মৎস্যজীবী সংগঠনগুলিকে। সামুদ্রিক মাছের সঙ্গে যুক্ত ৩,৮৬৪ জন এবং মিষ্টি মাছের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সাড়ে ৬ হাজার জন মৎস্যজীবী হিসেবে ক্ষতিপূরণের আবেদন জানান। ওই তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেয় মৎস্য দফতর। দীর্ঘ তালিকা দেখে চোখ কপালে ওঠে আধিকারিকদের। ভুয়ো মৎস্যজীবীর অভিযোগও সামনে আসতে শুরু করে। জেলা প্রশাসন তখন সংশ্লিষ্ট ব্লকগুলিকে তালিকা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়। তার পর খুঁটিনাটি দেখতে গিয়েই সামনে আসছে অনিয়ম।

Advertisement

রামনগর-১ ও ২, কাঁথি-১, দেশপ্রাণ, খেজুরি-২, নন্দীগ্রাম-১, সুতাহাটা এবং হলদিয়া উন্নয়ন ব্লকে মৎস্যজীবীদের বসবাস। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে খেজুরি-২ ও দেশপ্রাণ ব্লকের মৎস্যজীবীদের। খেজুরি-২ ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, ব্লকের ২২৭ জন মৎস্যজীবীর নামের তালিকা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তদন্তে বহু নাম বাদ গিয়েছে। একই ছবি দেশপ্রাণ ব্লকেও। প্রশাসন সূত্রে খবর, কালিন্দী পঞ্চায়েতের বাসিন্দা, পেশায় পঞ্চায়েত বিভাগের এক কর্মী, কাঁথি-১ ব্লকের এক মৎস্য খটির সভাপতির মেয়ে মৎস্যজীবী না হওয়া সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেছেন। অনেকে নৌকার রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্র না দেখিয়েই টাকা পেয়েছেন বলে অভিযোগ।

এই গরমিলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবীদের তালিকা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ফলে দেড়মাস পরেও অনেকেই বিপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। রামনগরের নিউ জলধা মৎস্য খটির মৎস্যজীবী আখতার উদ্দিনের নৌকো আর বাড়ি দুই-ই ভেঙেছে। নৌকা সারাতে ৫ হাজার টাকা পেলেও দিন কাটছে ভাঙা বাড়িতেই। জনকল্যাণ মৎস্য খটির মৎস্যজীবী নওশেদ খলিফাও ভাঙা বাড়ির ক্ষতিপূরণ পাননি। জুটেছে শুধু দুটো ত্রিপল। নওশেদ বলছেন, ‘‘এই বর্ষায় ত্রিপলের নীচে পরিবার নিয়ে থাকা খুবই কষ্টের।’’

মৎস্যজীবীরা কবে ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন, তাও নিশ্চিত নয়। সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎ বাগ বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসন এখনও তদন্ত করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের চূড়ান্ত তালিকা দেয়নি।’’ পরিস্থিতির জন্য তৃণমূল ঘনিষ্ঠ মৎস্যজীবী সংগঠনগুলিকেই দুষছে বিজেপি। দলের কাঁথি জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গরিব মৎস্যজীবীদের টাকা নিয়েও দুর্নীতি করতে ছাড়েনি তৃণমূল। মৎস্যজীবী সংগঠনগুলিকে হাত করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা হচ্ছে।’’ অভিযোগ উড়িয়ে জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ ও জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক আনন্দময় অধিকারী বলেন, ‘‘চলতি সপ্তাহের মধ্যেই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবীদের তালিকা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। আগামী সপ্তাহ থেকে অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement