এক-দু’মাস বেতন কিংবা পেনশন বাকি পড়ার ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি)-তে পেনশন বাকি পড়ে রয়েছে চার মাসের। বৃদ্ধ কর্মীরা বার বার সিএসটিসি-র দফতরে এসে তদ্বির করার পরেও এ নিয়ে কোনও সুরাহা হয়নি। সদুত্তর নেই নিগম কর্তৃপক্ষের কাছেও। পরিবহণ দফতরের কর্তাদের অবশ্য দাবি, নিয়মমাফিক প্রতি মাসেই পেনশনের জন্য টাকা চেয়ে তাঁরা অর্থ দফতরকে ফাইল পাঠিয়েছেন। কিন্তু অর্থ দফতরের অনুমোদন না মেলায় পেনশন দেওয়া যাচ্ছে না। রাজ্য প্রশাসনের একাংশের কর্তাদের প্রশ্ন, মেলা-খেলা-উৎসবের জন্য সরকারের শ’য়ে শ’য়ে কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ, মাত্র কয়েক হাজার কর্মীর পেনশনের টাকাই জোগাড় হচ্ছে না?
২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরে সরকারের তরফে পরিবহণ নিগমগুলির বেতন ও পেনশন দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, নিগমগুলিকেই কর্মীদের বেতন ও পেনশনের ব্যবস্থা করতে হবে। কয়েক মাস বেতন বন্ধ থাকার পরে ঠিক হয়, মোট খরচের ২৫% নিগমগুলিকে রোজগার করতে হবে। বাকিটার জোগান দেবে সরকার। পাশাপাশি, নিগমগুলিকে লাভজনক রাস্তায় নিয়ে যাওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বাস্তবে সে সবের কিছুই হয়নি। ফলে, প্রতি মাসেই প্রতিটি নিগমের বেতন ও পেনশন নিয়ে টানাপড়েন চলে সরকারের সঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ নিগম (ডব্লিউবিএসটিসি) ছাড়া বাকি সব নিগমেই কমবেশি এই সমস্যা রয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরিবহণ কর্তারা জানাচ্ছেন, কোনও নিগমে তিন-চার মাস পেনশন বকেয়া থাকার ঘটনা প্রায় নজিরবিহীন।
সিএসটিসি সূত্রের খবর, গত নভেম্বর মাস থেকে পেনশন পাচ্ছেন না সিএসটিসি-র হাজার পাঁচেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। সিএসটিসি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘সাকুল্যে পেনশনের জন্য প্রয়োজন মাসে ৪ কোটি টাকা। প্রতি মাসেই আমরা নিয়মমাফিক টাকা চেয়ে পরিবহণ দফতরের কাছে পাঠিয়েছি। কিন্তু সেই অর্থ এখনও এসে পৌঁছয়নি।’’ পরিবহণ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, ‘‘ফাইল আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা অর্থ দফতরকে পাঠিয়েছি। কিন্তু অনুমোদন আসেনি।’’
সিএসটিসি-র পেনশনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা অমর মজুমদার বলেন, ‘‘নভেম্বর মাস থেকে আমরা পেনশন পাচ্ছি না। এখন আমার ৮২ বছর বয়স। বার বার সিএসটিসি অফিসে গিয়ে তদ্বির করাও সম্ভব নয়। তা-ও গিয়ে বলেছি। কিন্তু ওঁদের কাছেও কোনও সদুত্তর নেই।’’ অমরবাবুর আক্ষেপ, ‘‘সরকার কোটি কোটি টাকা উৎসবে খরচ করতে পারছে, আর আমাদের পেনশনের টাকাই দিতে পারছে না!’’
অমরবাবু সরকারকে দোষারোপ করলেও পরিবহণ দফতরের কর্তাদের একাংশ অবশ্য এর দায় চাপাচ্ছেন সিএসটিসি কর্তৃপক্ষের উপরেও। ওই কর্তাদের কথায়, ‘‘সিএসটিসি-কে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে ৬৭৫টি নতুন বাস কিনে দেওয়া হয়েছে। রোজগার বাড়াতে বেশির ভাগ রুটে এসি বাস চালানো হচ্ছে। লাভজনক রুটেই শুধু বাস চালানো হচ্ছে। তা-ও রোজগার বাড়ছে না!’’
সিএসটিসি সূত্রে অবশ্য খবর, বাস বাড়লে কী হবে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কার্যত সব পুরনো বাসই বসে গিয়েছে। নতুন বাসের মধ্যেও প্রায় ৫০টি বসে গিয়েছে। এই অবস্থায় বাস বাড়িয়েও লাভ হয়নি। রোজগারও বাড়েনি। সিএসটিসি রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই।