ফুল বাজারে বেশির ভাগেরই মাস্ক পরা নেই। —নিজস্ব চিত্র।
করোনা-গ্রাফ বেশ ঊর্ধ্বমুখী পূর্ব মেদিনীপুরে। আক্রান্তের নিরিখে জেলার মধ্যে কোলাঘাট ব্লক এখন প্রথম সারিতে। অথচ সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও করোনা সচেতনতার চূড়ান্ত অভাব। ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে কোলাঘাট ফুল বাজারের ছবি আরও মারাত্মক। গোটা বাজারটাই প্রায় মাস্কহীন। সামাজিক দূরত্বও কার্যত শিকেয়।
রাজ্যের একটা বড় অংশের চাহিদা পূরণ হয় কোলাঘাট ও সংলগ্ন এলাকার ফুলে। প্রতিদিন ভোর থেকে কোলাঘাট ফুল বাজারে ভিড় জমান এলাকার চাষি থেকে শুরু করে কলকাতা ও শহরতলির পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা। সেই বাজারেই অসেচতনতার ছবিটা বেশ ভয়াবহ।
বুধবার ফুল বাজারে গিয়ে দেখা গেল, বহু মানুষই মাস্ক ছাড়া ঘোরাফেরা করছেন। ক্যামেরা দেখলেই তড়িঘড়ি পকেট থেকে মাস্ক বার করে পরে নিচ্ছেন। পুলিশ তাড়া করলে অনেকেই ছুটে পালাচ্ছেন। ফুল বাজারে সামাজিক দূরত্ব বা কোভিড সচেতনতার কোনও চিহ্নই নেই।
যদিও কোলাঘাট ফুল বাজার পরিচালন সমিতির সম্পাদক দিলীপ প্রামাণিকের দাবি, এখনও পর্যন্ত তাঁদের ফুল বাজারে কেউ করোনা আক্রান্ত হননি। তবে এখন যে ভাবে করোনা বাড়ছে তাতে দ্রুত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘এখন থেকে প্রতিনিয়ত মাইক প্রচার করে মাস্ক ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। যাঁদের মাস্ক থাকবে না তাঁদের বাজার সমিতি থেকে মাস্ক বিতরণ করা হবে। এ ছাড়াও বাজারে ফুল কেনাবেচা শেষ হয়ে গেলে অযথা ঘোরাঘুরি না করে দ্রুত বাড়ি ফিরে যেতে বলা হচ্ছে।’’
তবে ফুল বাজারের এই দুরবস্থার কথা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের মেন্টর অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কোলাঘাটে হঠাৎ করে করোনার বাড়বাড়ন্ত উদ্বেগ বাড়িয়েছে। আমরা টাস্ক ফোর্স-এর মিটিং করেছি ব্লকে। বিডিও, থানা, স্বাস্থ্য দফতর এবং পঞ্চায়েতকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব মানুষকে সচেতন করে মাইকিং করতে হবে। মাস্ক ছাড়া বাইরে যে বেরনো যাবে না, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।’’
ফুল বাজারে ক্রেতারা মাস্ক ব্যবহার করলেও বিক্রেতারা মাস্ক ব্যবহার করছেন না বলে অসিতের অভিযোগ। তাঁ কথায়, ‘‘গত বার এক প্রখ্যাত ব্যবসায়ীর থেকে করোনা ছড়িয়েছিল। যার জেরে বড়সড় খেরাসৎ দিতে হয়েছিল। কিন্তু এ বার মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব স্পষ্ট।’’
ফুল বাজার পরিচালন সমিতির মতে, পুলিশের হস্তক্ষেপ ছাড়া মানুষকে বাগে আনা যাবে না। কিন্তু প্রশাসনের খামতি রয়েছে বলেই তাদের অভিযোগ। অসিত বলেন, ‘‘বেপরোয়া হয়ে বিধিনিষেধ অমান্য করছেন একটা শ্রেণির মানুষ। যার ফলে কোলাঘাটে করোনার প্রকোপ যথেষ্ট বেড়েছে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় আগামী ৩ দিনের মধ্যে পঞ্চায়েতের এক্কেবারে নীচের স্তর পর্যন্ত টাস্ক ফোর্সের মিটিং করে যত বেশি সম্ভব প্রচারে জোর দেওয়া হচ্ছে।’’ একই ভাবে পুলিশকে কঠোর ভাবে কাজে নামার জন্যও চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।