ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী সুন্দরী বিবি। —নিজস্ব চিত্র।
দুই নাতনিকে উত্ত্যক্ত করছিল পাড়ারই ছেলে। রুখে দাঁড়িয়েছিলেন দাদু। সেই ‘অপরাধে’ তাঁকে গাড়িতে পিষে মারার অভিযোগ উঠল পড়শি যুবকের বিরুদ্ধে।
নদিয়ার করিমপুরে আচমকাই ঘটনাটা ঘটে যায় শনিবার সকালে। তারাপুর মোড়ে আরও কয়েক জনের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন তপসের মণ্ডল (৭২)। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, তীব্র গতিতে গাড়ি চালিয়ে তাঁকে ধাক্কা মারে টিঙ্কু মণ্ডল নামে ওই যুবক। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি সে। তাঁর দেহ গাড়ির নীচে আটকে গেলে সেই অবস্থাতেই বেশ কিছুটা ঘষটে নিয়ে যায় টিঙ্কু।
মারাত্মক আহত তপসেরকে রাস্তা থেকে তুলে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয় লোকজন। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। ধাক্কা মারার পরে টিঙ্কুও সম্ভবত বুঝে গিয়েছিল, সে পার পাবে না। সোজা গাড়ি নিয়ে হোগলবেড়িয়া থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে সে। নদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) তন্ময় সরকার বলেন, ‘‘খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে গাড়িটিকেও।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তপসেরের বড় নাতনির বয়স বছর উনিশ, তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বছর ষোলোর ছোট নাতনি স্কুলে পড়ে। তাদের বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, দু’জনকেই নিয়মিত উত্ত্যক্ত করত টিঙ্কু। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল যে, বাড়ির বাইরে পা রাখাই দায় হয়ে পড়ে দুই বোনের। এ দিন সকালে পাড়ার দোকান থেকে ফেরার পথে টিঙ্কু ফের তাদের উত্ত্যক্ত করে। খবর পেয়ে টিঙ্কুর বাড়িতে গিয়ে চেঁচামেচি করেন তপসের। টিঙ্কু তখনই মারমুখী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু তপসেরের সঙ্গে লোক থাকায় কিছু করতে পারেনি।
পরে তপসের যখন পাড়ার মোড়ে বসে আড্ডা দিচ্ছেন, গাড়ি নিয়ে ছুটে আসে টিঙ্কু। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ পুলিশকে জানিয়েছেন, গাড়ি চালাতে চালাতেই টিঙ্কু চেঁচাচ্ছিল— ‘তপাকে আজ মেরেই ফেলব। সামনে যে আসবে তাকেও রেয়াত করব না!’ তার মূর্তি দেখে যে যে দিকে পারে দৌ়ড় দেয়। পালাতে পারেননি বৃদ্ধ তপসের। গাড়িটি সোজা ছুটে এসে তাঁকে ঘষটে নিয়ে যায়।
টিঙ্কু অবশ্য খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তার দাবি, তপসের হঠাৎ তার গাড়ির সামনে চলে আসায় দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। জনতার হাতে ধরা পড়ে মার খাওয়ার ভয়ে পালিয়ে সোজা থানায় চলে যায়।
তপসেরের নাতনি এখনও সিঁটিয়ে আছেন। তাঁদের আর্জি, ‘‘ওদের যেন কঠোর শাস্তি হয়। ছাড়া পেয়ে গেলে ও আমাদেরও মেরে ফেলবে।’’ টিঙ্কুর দাদু রোজিমুদ্দিন শেখ বলেন, “নাতির জন্য মানসম্মান সব শেষ হয়ে গেল।’’