দেবব্রত পাল
বাড়ির গেটের কাছে পৌঁছেই চোখ ছলছল করে উঠল ভদ্রলোকের। তবলায় প্রথম হওয়া ছেলের পুরস্কার নেওয়ার ছবি আর শংসাপত্র তাঁর হাতে ধরা। কোনওমতে ঘরে ঢুকে সেজো বোনকে সেগুলি ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘আমি মন্দির থেকে ঘুরে আসছি। এগুলো রাখ। বাবুর!’’
গত ১০ জুন দক্ষিণ কলকাতার বিবেকানন্দ পার্কে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ চলাকালীন বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয় শ্রীরামপুরের বাসিন্দা বছর একুশের দেবব্রত পালের। দেবব্রতের সারা শরীর ঝলসে গিয়েছিল। তাঁর সঙ্গে থাকা বেহালার বাসিন্দা এক তরুণ ক্রিকেটার কোনওমতে বেঁচে গিয়েছিলেন। সেই ঘটনার ৪৮ দিনের মাথায়, শনিবারই ধর্মতলায় বজ্রাঘাতে মৃত্যু হল অজয় মল্লিক নামে আর এক যুবকের। রবিবার সেই দেবব্রতেরই তবলার পঞ্চম বর্ষের পরীক্ষার শংসাপত্র আর পুরস্কার নেওয়ার ছবি তুলে দেওয়া হয়েছে তাঁর বাবা দীপকবাবুর হাতে। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘অজয়ের বাবার এখন কী মনের অবস্থা, বুঝি! ছেলে-মেয়েই তো আমাদের সব। আমাদের আগে তারাই যখন চলে যায়, আর বাঁচার ইচ্ছে থাকে না।’’ সেই সঙ্গে বললেন, ‘‘আমার ছেলের তবলার সার্টিফিকেট দিয়েছে আজ।’’ গলা ধরে
আসে দীপকবাবুর।
প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে অবসর নেওয়া দীপকবাবুর ইচ্ছে ছিল ছেলে বড় ক্রিকেটার হবে। ছেলেকে তাই বিবেকানন্দ পার্কের ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়েছিলেন তিনি। প্র্যাকটিস থাকলে নিজেই ছেলেকে নিয়ে আসতেন। ছেলের মৃত্যুর পরে সেই দীপকবাবুর জীবনই কেমন যেন ছন্দহীন হয়ে পড়েছে। স্ত্রী চন্দনাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন মেয়ে লাবণীর কাছে। লাবণী আলিপুরদুয়ারে ডাক বিভাগের কর্মী। তিনি মাকে নিয়ে গেলেও বাবা যেতে চাননি তাঁদের সঙ্গে। সেজো বোন শর্মিলার সঙ্গেই এখন থাকেন দীপকবাবু। মেয়ের কাছে যাননি কেন? শর্মিলা বলেন, ‘‘দাদা এ বাড়ি ছাড়তে চায় না। ছেলের সব খেলার জিনিস ঝাড়পোঁছ করে। ওর স্মৃতির সঙ্গেই থাকে।’’
এ দিন দেবব্রতের ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা গেল, বৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখা হয়েছে। মূল কোচ আব্দুল মাসুদ খেলোয়াড়দের নিয়ে ইংল্যান্ডে গিয়েছেন। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বিনোদ সেন। তিনি জানান, মাঠে বজ্ররোধী ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘দেবব্রতের ঘটনার পরে বৃষ্টি এলেই আমরা ছেলেদের মাঠ থেকে তুলে নিই। কোনওমতেই ঝুঁকি নেওয়া যায় না।’’ এ দিনও দুপুরের বৃষ্টির পরে সেখানে প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এক তরুণ ক্রিকেটার বলেন, ‘‘মাঠের যে অংশে সে দিন বাজ পড়েছিল, সে দিকটা এখন একদমই ব্যবহার করা হয় না।’’