প্রতীকী ছবি।
বিধানসভার স্থগিত হয়ে থাকা দু’টি কেন্দ্রের নির্বাচন এবং ভোটের পরে শূন্য হওয়া চারটি আসনের উপনির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও স্থির করেনি নির্বাচন কমিশন। তার আগেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন, ভবানীপুরে উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা প্রার্থী দিতে চান না। ভবানীপুরের উপনির্বাচন এবং সামশেরগঞ্জে নির্বাচনের প্রার্থীর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবুও জানিয়েছেন, তাঁর ‘ব্যক্তিগত’ মতই এখনও পর্যন্ত সামনে এসেছে শুধু। আলোচনায় যেতে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই।
কলকাতার ভবানীপুর এবং মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ আসন দু’টি নিয়ে দু’রকম জটিলতা রয়েছে জোট শিবিরে। ভবানীপুরে প্রদেশ সভাপতি প্রার্থী দেওয়ার পক্ষপাতী নন। কিন্তু বাম শিবিরের বড় অংশের মত, প্রার্থী না দিলে তৃণমূল এবং বিজেপির হাতে ময়দান ছেড়ে দিয়ে নিজেদের একেবারে লড়াই থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। আবার সামশেরগঞ্জে কংগ্রেস ও সিপিএম, দু’দলেরই প্রার্থী ছিল। করোনায় কংগ্রেস প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় ভোট স্থগিত হয়েছিল। ওই আসনে প্রার্থী দিতে চায় কংগ্রেস। এই গোটা বিষয়ের মীমাংসা করার লক্ষ্যেই কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা চাইছে সিপিএম। সে ক্ষেত্রে ভবানীপুরে কংগ্রেস প্রার্থী দিল না, সিপিএম সেই জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করল এবং সামশেরগঞ্জে কংগ্রেসকে রেখে সিপিএম প্রার্থী তুলে নিল— এমন রফার প্রস্তাবও চর্চায় রয়েছে।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর আলোচনায় ভবানীপুরে ময়দান ছেড়ে না দেওয়ার পক্ষেই মত ভারী। দলের রাজ্য নেতৃত্বের বড় অংশের যুক্তি, বিজেপি ওই কেন্দ্রে প্রার্থী দেবে। সেখানে বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে না চাইলে বাম বা কংগ্রেসকে ‘সমমনোভাবাপন্ন’ কাউকে সমর্থন দেওয়ার রাজনৈতিক কৌশল নিতে হবে। তৃণমূলকে ‘কৌশলগত সমর্থন’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া কি যুক্তিসঙ্গত হবে? তখন এই একটি কেন্দ্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়েই বিজেপি নতুন করে প্রচারে নেমে যাবে! সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘হার-জিত পরের প্রশ্ন। নির্বাচন রাজনৈতিক সংগ্রামের অংশ। প্রার্থী না দিলে নিজেদের রাজনীতি থেকেই সরে আসতে হবে। তাই এই প্রশ্নে আলোচনা দরকার।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবুও বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যিনি হয়ে গিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেওয়া যেতে পারে, এই ব্যক্তিগত মত আমি জানিয়েছি। দলে কোনও পরচা করে সিদ্ধান্ত হয়নি! সিপিএমের সঙ্গেও এই বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। জোট আর দরকার নেই, এমন কোনও সিদ্ধান্ত তো কোনও স্তরে এখনও হয়নি।’’ অধীরবাবু জানিয়েছেন, সামশেরগঞ্জে তাঁরা প্রার্থী দিতেই চান। তবে প্রয়াত প্রার্থী রেজাউল হকের স্ত্রীকে টিকিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তিনি এখন রাজি নন। তাই প্রার্থী বদল করতে হবে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর।
অন্য দিকে, বামফ্রন্ট পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে যে চিঠি দিয়েছিলেন, তার জবাব দিয়ে বিমানবাবু জরুরি ভিত্তিতে বামফ্রন্টেই আলোচনা চেয়েছেন। তবে নরেনবাবুরা চাইছেন, আন্দোলন থেকে নির্বাচন— বামফ্রন্টের ঐক্য বজায় রেখেই চলা হবে, এই মর্মে লিখিত আশ্বাস আগে দিন বিমানবাবু। তার পরে ফ্রন্ট বৈঠক ডাকা হোক।