বর্ধমানেও জোটের সওয়াল সিপিএমে

দলের সদ্যসমাপ্ত রাজ্য কমিটির বৈঠকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিপক্ষে মুখ খুলেছিলেন বর্ধমান জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। রাজ্য কমিটি অবশ্য সংখ্যাগরিষ্ঠের মত নিয়ে জোট রেখে দেওয়ার পক্ষেই রায় দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ১০:১৪
Share:

কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে আক্রান্ত দুই সিপিএম কর্মী। মঙ্গলবার অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

দলের সদ্যসমাপ্ত রাজ্য কমিটির বৈঠকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিপক্ষে মুখ খুলেছিলেন বর্ধমান জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। রাজ্য কমিটি অবশ্য সংখ্যাগরিষ্ঠের মত নিয়ে জোট রেখে দেওয়ার পক্ষেই রায় দিয়েছে। এ বার বর্ধমান জেলা কমিটির মধ্যেও জোটের পক্ষে জোরালো সওয়াল উঠে এল। বৈঠকে উপস্থিত থেকে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও জানিয়ে দিলেন, শাসক দলের সন্ত্রাসের মোকাবিলা-সহ বিভিন্ন প্রশ্নে কংগ্রেস এবং ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ কর্মসূচি থাকবে।

Advertisement

বর্ধমান জেলায় ২৫টি আসনের ১৯টিতেই এ বার জিতেছে তৃণমূল। বাম-কংগ্রেস জোট পেয়েছে ৬টি। তার মধ্যে আসানসোল-দুর্গাপুরের শিল্পাঞ্চলে জোটের ফল তুলনায় ভাল হয়েছে। ওই এলাকার ৯টি আসনের চারটিতে জিতেছে তারা। ফল বেরনোর পর থেকে শিল্পাঞ্চলে বাম ও কংগ্রেস এক সঙ্গেই নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাজ্য কমিটির বৈঠকে গিয়ে জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক, প্রবীণ নেতা অমল হালদার বা শিল্পাঞ্চলের প্রাক্তন বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় জোটের বিরুদ্ধে মত দিয়েছিলেন। অথচ জেলা কমিটির মধ্যে মঙ্গলবার শিল্পাঞ্চলের নেতারা তো বটেই, গ্রামীণ বর্ধমানের নেতাদের একাংশও জোটের পক্ষে সরব হয়েছেন।

জেলা সিপিএমের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘জোট করে শুধু ভাল ফল নয়, সন্ত্রাসের মোকাবিলাও করা যাচ্ছে। তাই শিল্পাঞ্চলের নেতারা যে জোটের পক্ষেই যাবেন, তা জানা ছিল। গ্রামীণের নেতারা সূর্যবাবুকে প্রশ্নে জেরবার করবেন বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু গ্রামীণের অনেক নেতাও অন্তত আগামী লোকসভা ভোট পর্যন্ত জোট রেখে চলার উচিত বলে মত দিয়েছেন।’’ তবে গ্রামীণের কিছু নেতা এ দিনের বৈঠকে এটাও বলেছেন যে, বুথওয়াড়ি তথ্য ঘেঁটে তাঁরা বুঝেছেন যেখানে কংগ্রেসের কিছু সংগঠন ছিল, সেখানে তাদের ভোট বামেদের দিকে আসেনি।

Advertisement

বৈঠক শেষে সূর্যবাবু বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের সন্ত্রাস রুখতে কী করণীয়, কী ভাবে আন্দোলন হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে। জেলাগুলি থেকে আসা তথ্য নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে আলোচনা হবে।’’ জেলায়
জেলায় দলের সাংগঠনিক রদবদল হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজ্য সম্পাদক।

বর্ধমানের মঙ্গলকোটে এ দিনই দুই সিপিএম কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। রফিকুল হাসান ও ইসমাইল শেখ নামে ওই দুই কর্মীকে কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাধনা মল্লিকের দাবি, ‘‘তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে ওই এলাকায় আমাদের কর্মীরা থানা পর্যন্তও যেতে পারছেন না।’’ তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অন্য দিকে, বর্ধমানে ভোটের দিন খণ্ডঘোষে ফজল হক ও দুখীরাম ডাল নামে যে দুই সিপিএম কর্মী নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের তরফে সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে।

বর্ধমানে যখন জোটের পক্ষে সুর বাড়ছে, তখন বীরভূমে ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের প্রতিবাদে জানাতে সিউড়িতে প্রশাসনিক ভবেনর সামনে অবস্থান-বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী, রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ জেলা বাম নেতৃত্ব। মঞ্চে তাঁদের পাশেই ছিলেন হাঁসনের কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রশিদও। পরে বাম নেতারা যান খয়রাশোলের নওপাড়ায়। সেখানে সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেসের সিউড়ি শহর সভাপতি চঞ্চল চট্টোপাধ্যায়। সম্প্রতি ওই গ্রামেই বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছিল একটি আস্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। স্থানীয় বাসিন্দারা বিরোধী নেতাদের কাছে অভিযোগ করেন, প্রকৃত অপরাধীদের না ধরে নিরপরাধদের ধরছে পুলিশ। ঋতব্রত জানান, খাগড়াগড়ের পর থেকে যা ঘটছে, সেই প্রসঙ্গ সংসদে তুলবেন।

নিজের কেন্দ্রে ফিরে যাওয়ায় বীরভূমের প্রতিনিধিদলে এ দিন শেষ পর্যন্ত যাননি ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলি ইমরান রাম্জ (ভিক্টর)। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলছেন, তাঁদের জোট শুধু সিপিএমের সঙ্গে। শরিকদের নিয়ে তাঁরা ভাবছেন না। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বা সূর্যবাবু কেন এমন মন্তব্য নিয়ে কিছু বলছেন না?’’ বৃহত্তর বাম ঐক্যের জন্য বিমানবাবু এ দিনই এসইউসি এবং সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের সঙ্গে কথা বলেছেন। কংগ্রেসের সঙ্গ না ছাড়লে তারা আলোচনায় রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement