চাপে পড়ে ‘বন্ধুতা’য় নারাজ ‘জগাই-মাধাই’

বিজেপির বিপদ মোকাবিলায় একসঙ্গে লড়াই করার জন্য বুধবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে কংগ্রেস ও বামেদের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বিধানসভাতেই পত্রপাঠ সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন কংগ্রেস ও বাম পরিষদীয় নেতারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯ ০২:১৪
Share:

বিধানসভা চত্বরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মনোজ চক্রবর্তী এবং আব্দুল মান্নান। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

লোকসভা ভোটের প্রচারেও সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপিকে একসঙ্গে বিঁধে ‘জগাই, মাধাই ও বিদাই’ বলে আক্রমণ করতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার ‘বিদাই’কে রুখতে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না ‘জগাই ও মাধাই’!

Advertisement

বিজেপির বিপদ মোকাবিলায় একসঙ্গে লড়াই করার জন্য বুধবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে কংগ্রেস ও বামেদের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বিধানসভাতেই পত্রপাঠ সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন কংগ্রেস ও বাম পরিষদীয় নেতারা। কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী এবং সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও মনে করছেন, চাপে পড়ে তৃণমূল নেত্রী যা বলছেন, তা শুনে তাঁদের লাইন বদলানোর কোনও কারণ নেই। তাঁদের বক্তব্য, বাংলায় বিজেপির এমন উত্থানের জন্য দায়ী তৃণমূলের নীতিই।

দিল্লিতে বসেই মমতার আবেদনের খবর পেয়েছেন কংগ্রেস ও সিপিএমের দুই শীর্ষ নেতা। অধীরবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থানের কোনও স্থিরতা আছে? বিজেপির আগ্রাসনে চাপে পড়ে এখন এ সব বলছেন। আগে শুভবুদ্ধির উদয় হলে বাংলার এই অবস্থাই হত না। কংগ্রেস এবং বামকে ভেঙে, কার্যালয় থেকে জেলা পরিষদ সব কিছু দখল করে, জনপ্রতিনিধি ভাঙিয়ে বিজেপির জন্য জায়গা তৈরি করে দিয়েছেন তিনিই।’’ তবে একই সঙ্গে বহরমপুরের সাংসদ যোগ করেছেন, ‘‘কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত তো আমি নিতে পারি না। সিদ্ধান্ত নেবেন সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী।’’

Advertisement

অধীরের মতো একই যুক্তি ইয়েচুরিরও। তবে প্রকাশ্যে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, ‘‘বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী কিছু কথা বলেছেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে তা নিয়ে আমার মন্তব্য করা উচিত নয়। আমাদের দলের রাজ্য নেতৃত্বই যা বলার, বলছেন। এইটুকুই বলতে পারি, বাংলার পরিস্থিতির নিরিখে আমাদের অবস্থান বদলের কোনও কারণ ঘটেনি।’’ লোকসভা ভোটে আসন সমঝোতা করতে না পারলেও এখন আবার একসঙ্গে আন্দোলনের পথে হাঁটতে শুরু করেছেন রাজ্যের সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। বিজেপি ও তৃণমূলের মোকাবিলায় যৌথ ভাবে এগোনোর এই পথেই দু’দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিলমোহর আদায়ে বরং সক্রিয় হচ্ছে বিধান ভবন ও আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

নাম না করে এ দিন অধীর-প্রসঙ্গ এনেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও। তাঁর আবেদন শুনে কংগ্রেসের সচেতক মনোজ চক্রবর্তী যখন পঞ্চায়েতে ভোট লুট এবং তৃণমূলের দল ভাঙানোর রাজনীতির কথা তুলছেন, তখন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘তুমি জিতলে কী করে? তোমার দাদা (অধীর) জিতল কী করে?’’ মনোজবাবু পাল্টা বলেন, ‘‘আপনাদের দয়ায় জিতিনি! যাঁদের ভাঙিয়েছেন, তাঁরা সব এখানেই বসে।’’ বলামাত্রই দলত্যাগী জনাপাঁচেক কংগ্রেস বিধায়ক সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান।

কংগ্রেস ও সিপিএম নেতাদের যুক্তি, ১৯৯৮ সালে বিজেপির সঙ্গে জোট করে বাংলায় তাদের পা রাখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রীই। ক্ষমতায় আসার পরেও তৃণমূলের রাজনীতি বিজেপিকে উল্টো মেরুকরণের ফায়দা নিতে সাহায্যে করেছে। যে কারণে বিধানসভার চত্বরে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আগে তাঁর কৃতকর্মের জন্য মানুষের কাছে ক্ষমা চান। তার পরে আমরা ভাবব, আমরা কী করব!’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রেরও মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেস জন্মলগ্ন থেকেই আরএসএস-বিজেপির মেরুকরণ এবং বিভাজনের রাজনীতি রুখছে। আপনি তো বলেন, কংগ্রেস সাইনবোর্ড হয়ে গিয়েছে। এখন কেন সেই সাইনবোর্ডের হাত ধরতে চাইছেন?’’

মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন নাকচ করে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘নো চান্স! বিজেপির বিরুদ্ধে আমরা প্রাণপণ লড়ব। কিন্তু যে মুখ্যমন্ত্রী অপ্রয়োজনে সংখ্যালঘু তোষণের পথে গিয়ে বিজেপিকে মেরুকরণ করতে দিয়েছেন, তাঁর হাত ধরে নয়!’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement