পার্ক স্ট্রিটে সিপিএমের পুস্তক বিপণি। — নিজস্ব চিত্র
শারদোৎসব তো বটেই। ইদ ও দীপাবলিতেও হয়েছে। বড়দিনটাই বা তা হলে বাকি থাকে কেন?
উৎসবের মেজাজের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে এ বার বড়দিনেও মানুষের দরবারে পৌঁছনোর চেষ্টায় নামল সিপিএম। শহরে বড়দিন উদযাপনের প্রাণকেন্দ্র পার্ক স্ট্রিটে পুস্তক বিপণি খোলা হল দলের যুব ও ছাত্র সংগঠনের আয়োজনে। চিরাচরিত খানাপিনার ভিড়ের মাঝে শনি ও রবিবার বহু মানুষ যে স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে বইয়ের পাতা উল্টে দেখেছেন, তাতে জনসংযোগের লক্ষ্য অনেকটাই পূরণ করা যাচ্ছে বলে সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন। আগামী দিনে কলকাতার বাইরে অন্যত্রও এই উদ্যোগ ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
দুর্গাপুজোর মণ্ডপ চত্বরে সাহিত্যের স্টল দেওয়া বিভিন্ন কমিউনিস্ট পার্টির বহু দিনের রেওয়াজ। গত কয়েক বছর ধরেই সিপিএম নেতারা দলকে বার্তা দিচ্ছেন, সামাজিক উৎসবে আরও বেশি করে সামিল হতে হবে মানুষের মনের কাছাকাছি পৌঁছনোর জন্য। এর সঙ্গে ধর্মাচরণের কোনও সম্পর্ক নেই। সেই নতুন ভাবনার সূত্র ধরেই এ বছর ইদের সময়ে নিজেদের ছবি সংবলিত শুভেচ্ছা-বার্তা বিলি করেছেন সিপিএমের নেতা-বিধায়কেরা। দুর্গাপুজো ও দীপাবলিতে তার পাশাপাশি রাস্তায় হোর্ডিং-ফ্লেক্স দেওয়া হয়েছে আম জনতাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে। যা আগে কখনও সিপিএম করেনি। এ বার বড়দিনে পুস্তক বিপণি দিয়েই জনসংযোগে শান দেওয়ার চেষ্টা হল। দলের এক যুব নেতার কথায়, ‘‘এখন বারবারই বলা হচ্ছে, সামাজিক উৎসবে মানুষের পাশে থাকতে হবে। তাই আমরা একটা চেষ্টা করেছি। তাতে সাড়াও পেয়েছি।’’
পার্ক স্ট্রিটে শনিবার বিপণির উদ্বোধন হয়েছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য মানব মুখোপাধ্যায়ের হাতে। নোট-সঙ্কটের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে স্টলে রাখা হয়েছে ডি়জিটাল বিকিকিনির ব্যবস্থা। এই ধরনের পুস্তক বিপণিতে ডিজিটাল লেনদেনের সুযোগ আগে থাকত না। এ বার সামান্য টাকার চটি বই কিনেও কার্ডে দাম মেটাতে পারছেন মানুষ। বাংলা, হিন্দি, উর্দু ও ইংরেজি— চারটি ভাষার বই দু’দিনে বেশ কয়েক হাজর টাকার বিক্রি হয়েছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর। দক্ষিণ শহরতলির জোকায় বড়দিনে একটি মেলা প্রাঙ্গনে রবিবার আরও একটি স্টলের সূচনা করেছেন ডিওয়াইএফআইয়ের কলকাতা জেলা সভাপতি ইন্দ্রজিৎ ঘোষ।
সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার প্রেক্ষাপটে বড়দিনে যে তাঁরা দরাজ মেলামেশার বার্তা দিতে চান, তা বুঝিয়েছেন আলিমুদ্দিনের নেতারাও। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র যেমন টুইট-বার্তা— সম্প্রীতি, সৌভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের পরম্পরা এগিয়ে চলুক। মেরুকরণের রাজনীতিকে বিঁধে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, অন্ধকারের শক্তির বিরুদ্ধে মানুষের ঐক্যই জয়ী হবে। আঁধার রাত কাটিয়ে ওঠার কথা বলেছেন সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ও।