হেদুয়া থেকে কলেজ স্ট্রিটের পথে রিকশা মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।
সারদা ও নারদ-কাণ্ড তোলপাড় ফেলেছে এক সময়। নিয়োগ-দুর্নীতির দায়ে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, খাদ্যে দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিককে জেলে যেতে দেখেছে রাজ্যে। এত সবের পরেও পরপর নির্বাচনে জয় পেয়ে এসেছে শাসক দল। এ বার আর জি কর-কাণ্ডের সূত্রে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের দুর্নীতির ছবিও সামনে আসতে শুরু করেছে। অতীতে ভোটে সাফল্য না-পেলেও দুর্নীতির জালেই রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল কংগ্রেসকে বেঁধে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়াতে চাইছে সিপিএম।
হাওড়ায় জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর অভিযানে গিয়ে দু’দিন আগেই সিপিএমের যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ডাক দিয়েছেন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ‘ঘুঘুর বাসা ভাঙতে হবে’। বলতে গেলে, গোটা রাজ্যের নিরিখে এটাই এখন সিপিএমের ‘থিম’। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘নারী সুরক্ষার প্রশ্ন তো আছেই। কিন্তু আর জি কর হাসপাতালের ঘটনা একই সঙ্গে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিকাঠামোয় দুর্নীতির ভয়াবহ চেহারার একটা টুকরো সামনে এনে দিয়েছে। সরকারের শীর্ষ স্তর এই দুর্নীতি-চক্রকে প্রশ্রয় দিয়েছে, যুক্ত থেকেছে। শিক্ষা, খাদ্য, স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও বেনিয়মের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে প্রতিবাদ চাই।’’
দুর্নীতির চক্র ভাঙার ডাক দিয়ে আন্দোলনে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিলেও সিপিএমের সামনে প্রশ্ন এখন দু’টো। প্রথমত, নাগরিক প্রতিবাদ যে ভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠছে, সেখানে সিপিএমের কৌশল কী হবে? দ্বিতীয়ত, সরকার বদলের লক্ষ্যে আন্দোলন জোরালো করার সময়ে ‘মুখ’ হিসেবে কাউকে সামনে রাখা যাবে কি?
গড়িয়া থেকে যাদবপুরের পথে 'মুছবি যত, আঁকব তত' কর্মসূচি। —নিজস্ব চিত্র।
সিপিএম সূত্রের খবর, প্রতিবাদের প্রশ্নে আপাতত জোড়া কৌশলই নিয়ে চলবে দল। এক দিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষকে শামিল করে যথাসম্ভব নাগরিক প্রতিবাদ হবে। দলহীন সেই প্রতিবাদের মাঝে মাঝেই থাকবে দলীয় কর্মসূচি। যেমন, রবিবারই শহরে দুই অভিনব কায়দায় প্রতিবাদের নেপথ্যে ছিল সিপিএম তথা বামেরা। আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ শুধু ‘এলিট’ শ্রেণির নয়, সেই বার্তা দিতে হেদুয়া থেকে কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত মিছিল হয়েছে রিকশা নিয়ে। বিচারের দাবি তুলেছেন রিকশাচালকেরা। আবার রাতে গড়িয়া থেকে যাদবপুর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার পথে গান গেয়ে, ছবি এঁকে ‘বিচারহীন প্রহসনে’র প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিল্পীরা। বিচার চেয়ে, কোথাও মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে রাস্তায় লিখলে বহ ক্ষেত্রেই মুছে দিচ্ছে শাসক বাহিনী বা প্রশাসন। তাই এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘মুছবি যত, আঁকব তত’! তার পাশাপাশি আজ, সোমবারই লালবাজার অভিযানের ডাক দিয়েছে সিপিএম। শ্যামবাজারে দলের ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠনের অবস্থান চলবে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সেখানে রবি-সন্ধ্যায় শামিল হয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
আর ‘মুখ’ সামনে রাখার প্রশ্ন? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘আমাদের দল ব্যক্তি নয়, নীতি সামনে রেখে চলে। তবু মানুষ বিকল্প বাছতে গিয়ে মুখ খোঁজেন। সে ক্ষেত্রে মীনাক্ষীই আপাতত সামনে থাকবেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে মহিলা মুখই উপযুক্ত।’’ একই সঙ্গে সিপিএমের এক রাজ্য নেতার দাবি, ‘‘হাথরস, উন্নাও, মণিপুর-সহ এত অজস্র ঘটনা আছে যে, নারী নিগ্রহ-বিরোধী প্রতিবাদে বিজেপির বিশ্বাসযোগ্যতা পাওয়া কঠিন। এমতাবস্থায় তৃণমূলের পাশাপাশি বিজেপিকে কোণঠাসা করতে হবে।’’