সীতারাম ইয়েচুরি।
সরকারের মত বদলের সুবাদে অনুষ্ঠানের স্থান বদল হচ্ছে। তবে দলের শততম প্রতিষ্ঠা দিবস একাই পালন করতে চলেছে সিপিএম। প্রাক্-স্বাধীনতা আমলে গোড়ার দিকের দৃষ্টিভঙ্গির তফাতের প্রেক্ষিতে ওই অনুষ্ঠানে অন্তত কংগ্রেসকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন না সিপিএম নেতৃত্ব। সম্ভবত ডাক পাচ্ছে না সিপিআইও, যারা আদি কমিউনিস্ট পার্টি বলে নিজেদের দাবি করে।
কমিউনিস্ট পার্টি ও আন্দোলনের শতবর্ষ উদযাপন শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর থেকে। কলকাতায় ওই দিন শততম প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের অনুষ্ঠানে মূল বক্তা হিসেবে থাকবেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। থাকবেন সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরাও। একই সঙ্গে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের একশো বছর এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে বামেদের ভূমিকার বিষয়ে আলোচনা করার কথা ইতিহাস গবেষক চমন লালের। অনুষ্ঠানের জন্য নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম ভাড়া করতে চেয়েছিল আলিমুদ্দিন। অন্য অনুষ্ঠানের কারণ দেখিয়ে সে দিন স্টেডিয়াম দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। ঠিক হয়, অনুষ্ঠান হবে আলিপুরের উত্তীর্ণ অ্যাম্ফিথিয়েটারে। কিন্তু সোমবার ক্রীড়া ও যুবকল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবকে জানান, ১৭ তারিখ তাঁরা নেতাজি ইন্ডোর ব্যবহার করতে পারেন। রবীনবাবু গিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু অনুষ্ঠান-স্থল পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেন।
সূর্যবাবু এ দিন বলেন, ‘‘নেতাজি ইন্ডোর পাওয়া যাচ্ছে না বলেই আমরা ‘উত্তীর্ণ’ প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠান হবে বলে প্রচার করেছিলাম। এখন সরকার ইন্ডোর স্টেডিয়াম দেবে বলে জানানোয় আমরা অনুষ্ঠান ওখানে সরিয়ে নিচ্ছি।’’ সাম্প্রতিক কালের মধ্যে এই প্রথম সিপিএমের কোনও সভা হচ্ছে নেতাজি ইন্ডোরে। আলিমুদ্দিনে বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হবে সিপিএমের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক। প্রথম দিন এক বেলা বৈঠকের পরে রাজ্য কমিটির সদস্যের যাবেন শতবর্ষের অনুষ্ঠানে।
সূচনা লগ্নে জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যেই বাম ও সমাজবাদী ধারা হিসেবে কাজ করতেন কমিউনিস্টরা। কংগ্রেসকে কি তাঁরা শতবর্ষ উদযাপনে ডাকছেন? সূর্যবাবুর বক্তব্য, ‘‘যাঁরা বলবেন এবং যাঁরা শুনবেন, তাঁদের কারও অস্বস্তির কারণ যাতে না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় এই অনুষ্ঠানে আমরা অন্য কোনও দলকে ডাকছি না।’’ সূর্যবাবুদের যুক্তি, ১৯২১ সালে জাতীয় কংগ্রেসের আমদাবাদ অধিবেশনে পূর্ণ স্বরাজের দাবিতে খসড়া প্রস্তাব এনেছিলেন মৌলানা হসরত মোহানি (‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানের রচয়িতা) ও স্বামী কুমারানন্দ। মোহনদাস গাঁধীর তখন আপত্তি ছিল, কংগ্রেস সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। পুরনো ইতিহাস স্মরণ করার সময়ে এ সব প্রসঙ্গ এলে কংগ্রেসের অস্বস্তি হতে পারে।
কিন্তু বাম শিবিরেরই একাংশের প্রশ্ন, সে সব ‘অস্বস্তি’ অতীতে ফেলে কংগ্রেস-সিপিএম এখন সমঝোতা করেই চলছে। কিছু দিন আগেই গাঁধীজির দেড়শোতম জন্মদিন পালন উপলক্ষে প্রদর্শনীতে গিয়ে সুর্যবাবু, বিমানবাবু-সহ গোটা বামফ্রন্ট নেতৃত্ব প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে সোমেন মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এখন আর নতুন করে কি ‘অস্বস্তি’ হবে! সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের আবার পাল্টা যুক্তি, শতবর্ষের সূচনায় প্রথম কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানটি তাঁরা ‘দলীয় উপলব্ধির মঞ্চ’ হিসেবেই রাখতে চান।