—প্রতীকী ছবি।
লোকসভা নির্বাচনের বাকি আর কয়েক মাস। সংগঠনের হাল বহু ক্ষেত্রেই উদ্বেগজনক। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে সর্বভারতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ জোট ঘিরে রাজ্যে বিভ্রান্তি। এই পরিস্থিতিতে আগামী নভেম্বরের গোড়াতেই রাজ্য কমিটির বর্ধিত বিশেষ অধিবেশন করার সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম। সাধারণ ভাবে যাকে বলা যায় ‘মিনি প্লেনাম’। লোকসভা নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি ওই বিশেষ অধিবেশন থেকেই শুরু হয়ে যাওয়ার কথা।
কলকাতায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে ২০১৫ সালে হয়েছিল সিপিএমের সর্বভারতীয় সাংগঠনিক প্লেনাম। রাজ্য সিপিএমের প্লেনামও হয়েছে কলকাতায়। তবে এ বারের ‘মিনি প্লেনাম’ হতে চলেছে গঙ্গার ও’পারে। দলের রাজ্য কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ৩ থেকে ৫ নভেম্বর বর্ধিত বিশেষ অধিবেশন বসবে। তার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হাওড়া জেলা সিপিএমকে। দলীয় সূত্রের খবর, সিপিএমের হাওড়া জেলা দফতর অনিল বিশ্বাস ভবনের প্রেক্ষাগৃহেই ওই অধিবেশন আয়োজিত হতে পারে। রাজ্য কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং বিভিন্ন জেলা থেকে গণ-সংগঠনের নেতৃত্বকে বর্ধিত অধিবেশনে ডাকা হবে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গাতেই শাসক দলের বিরুদ্ধে ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তুলতে পেরেছিল সিপিএম। লুট ও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগের মধ্যেও অনেক জায়গায় বামেরা ভাল ভোটও পেয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের সবিস্তার পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, শাখা বা বুথ স্তরে সংগঠনের হাল স্বস্তিদায়ক নয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। লোকসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সক্রিয়তা বাড়ানোর উপরে জোর দেওয়া হয়েছে রাজ্য কমিটির সদ্যসমাপ্ত বৈঠকে। রাজনৈতিক কর্মসূচিকে সামনে রেখে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি এবং লোকসভা নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রভিত্তিক অগ্রাধিকার ঠিক করার লক্ষ্যেই রাজ্য কমিটির বর্ধিত বিশেষ অধিবেশনে আলোচনা হবে বলে দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত।
সিপিএম সূত্রের খবর, নিচু তলায় সংগঠনের বেহাল দশার পাশাপাশি জোটের প্রশ্নও উঠে এসেছে দলের রাজ্য কমিটিতে। দলের একাংশের দাবি, কংগ্রেস এবং আইএসএফ নেতৃত্বের সঙ্গে অবিলম্বে আলোচনায় বসুন সিপিএম নেতৃত্ব। বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফ মিলে যৌথ কর্মসূচি নিয়ে পথে নামা হোক। তা হলে লোকসভা ভোটের ক্ষেত্রপ্রস্তুত হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের কাছেও বার্তা যাবে যে, সর্বভারতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ থাকলেও রাজ্যে অন্য জোট তৈরি হয়ে গিয়েছে। ওই অংশের মতে, লোকসভা ভোট শিয়রে চলে এলে তার পরে আসন-রফার কথা শুরু করলে কাজের কাজ হবে না। জাতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’র মঞ্চে মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে সিপিএম নেতৃত্বকে দেখতে পাওয়া এই রাজ্যে বামেদের ক্ষতি করছে বলেও সরব সিপিএমের একাংশ।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘সংগঠনের জোর না থাকলে আন্দোলন বা নির্বাচন, কোনওটাতেই সুবিধা করা মুশকিল। সংগঠনকে যথাসম্ভব গুছিয়ে নেওয়াই এখন প্রথম লক্ষ্য। সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক সক্রিয়তার মধ্যে দিয়েই লোকসভার প্রস্তুতি নেওয়া হবে।’’