—প্রতীকী ছবি।
স্থানীয় স্তরে আন্দোলনের ধার বাড়িয়ে এবং তৃণমূল স্তরের সংগঠনকে পোক্ত করার দিকে নজর দিয়েই লোকসভা ভোটের প্রস্তুতিতে নামছে সিপিএম। পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত এই দুই বিষয়েই জোর দেওয়ার বার্তা উঠে এল দলের রাজ্য কমিটির বর্ধিত বিশেষ অধিবেশন থেকে। সেই সঙ্গেই ঠিক হল, আগামী দু’মাস যেমন স্থানীয় বিষয় নিয়ে এলাকাভিত্তিক কর্মসূচি ও আন্দোলন চলবে, তেমনই লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে নভেম্বর মাসেই কংগ্রেস, আইএসএফ-সহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা শুরু করবে সিপিএম।
সূত্রের খবর, তিন দিনের বর্ধিত অধিবেশনের শেষ পর্বে জবাবি ভাষণে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, স্থানীয় বিষয় চিহ্নিত করে আন্দোলনই মানুষের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর উপযুক্ত পথ। সন্ত্রাস ও কারচুপির বিপুল অভিযোগের মধ্যেও সেই পথেই পঞ্চায়েত ভোটে বামেরা তুলনামূলক ভাল ফল করতে পেরেছে। বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের বাইরে বিকল্প তুলে ধরতে গেলে সর্বত্র আন্দোলন ধারালো করাই বামেদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। এই সূত্রেই সংগঠনের প্রসঙ্গ এনেছেন রাজ্য সম্পাদক। তাঁর মতে, আন্দোলন ঠিক মতো করতে গেলে বুথ ও শাখা স্তরের সংগঠনকে সক্রিয় থাকতে হবে। ভোটের সময়ে ওই সংগঠনই কাজে লাগে। শাখার কাজ ঠিক ভাবে হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব এরিয়া কমিটির। নিচু তলার সংগঠন যে বহু জায়গাতেই সক্রিয় নেই এবং তরুণ প্রজন্মকে সংগঠনের কাজে টেনে আনার ক্ষেত্রে খামতি রয়ে গিয়েছে, তা-ও রাজ্য সম্পাদক মনে করিয়ে দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। আর দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ফের ব্যাখ্যা করেছেন, বিজেপিকে দেশের ক্ষমতা থেকে কেন দূরে রাখা দরকার। সেই লক্ষ্যেই ‘ইন্ডিয়া’ জোট তৈরি হয়েছে বলে ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশিই তিনি ফের উল্লেখ করেছেন, বাংলায় বিজেপি ও তৃণমূল, দুই শক্তির বিরুদ্ধেই বামেদের লড়াই চলবে।
হাওড়া জেলা সিপিএমের কার্যালয় অনিল বিশ্বাস ভবনে রবিবার বর্ধিত অধিবেশন শেষ হওয়ার পরেও দলের রাজ্য সম্পাদক সেলিম বলেছেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে মহিলা, যুব, পরিযায়ী শ্রমিক-সহ সমাজের বড় অংশের মানুষ তৃণমূলের সর্ব স্তরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়। তাঁদের সুসংহত করে দলের সঙ্গে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। সেই কাজ কতটা এগোল, তার পর্যালোচনার কাজ হয়েছে বর্ধিত অধিবেশনে।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘গোটা নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস জুড়ে গ্রাম-শহরে বাড়ি বাড়ি যাবেন সিপিএম কর্মীরা। পথসভা, জনসভা, পাড়া বৈঠক, গ্রামসভার মাধ্যমে খাদ্য, স্বাস্থ্য, নিয়োগ-দুর্নীতি, নারী নির্যাতনের মতো জ্বলন্ত বিষয় নিয়ে প্রচার চলবে। জোর দেওয়া হবে স্থানীয় উদ্যোগের উপরে।’’ বিজেপি কী ভাবে দেশের সর্বনাশ করছে, সেই প্রচারও চলবে বলে সেলিম জানান।
বর্ধিত অধিবেশনের পরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক আরও বলেছেন, লোকসভার আসন সমঝোতা নিয়ে বামফ্রন্টের শরিক দল এবং বাইরের বাম দলগুলির সঙ্গে নভেম্বরেই আলোচনা শুরু হবে। বিজেপি ও তৃণমূলের বাইরে অন্য শক্তিকে একত্রিত করতে চেয়ে কথা বলা হবে কংগ্রেস, আইএসএফের সঙ্গেও। সেই আলোচনার নির্যাস নিয়ে পর্যালোচনা হবে আগামী ৯-১০ ডিসেম্বর সিপিএমের পলিটব্যুরো এবং ১২-১৩ ডিসেম্বর রাজ্য কমিটির বৈঠকে। প্রসঙ্গত, মালদহে একটি কর্মসূচিতে গিয়ে আইএসএফের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘‘আমি ডায়মন্ড হারবারের বর্তমান সাংসদকে (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) প্রাক্তন সাংসদ বানাব! দল অনুমোদন দিলে আমি ডায়মন্ড হারবার থেকে লোকসভা ভোটের জন্য লড়াই করব। বলা হয়, ডায়মন্ড হারবার মডেল। তবে পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে আমরা দেখতে পেলাম, ডায়মন্ড হারবার মডেল কী!’’ ওই আসনটি আইএসএফ-কে ছেড়ে দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে দলে ও বাম শিবিরে এবং কংগ্রেসের সঙ্গেও কথা বলতে চায় সিপিএম।