CPM

‘আমি’ থেকে ‘আমরা’য় ফিরতে সিপিএমের নজর গ্রাম সংসদে

পঞ্চায়েত ভোটে জনতার উদ্দেশে আবেদনের পাশাপাশি গোটা ব্যবস্থা ও তার বর্তমান হাল নিয়ে দলের ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে ৭ পাতার ওই খসড়ায়।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:২৪
Share:

সিপিএমের নজর গ্রাম সংসদে। প্রতীকী ছবি।

শাসক সিপিএমের আমলে চর্চায় এসেছিল ‘আমরা-ওরা’র তত্ত্ব। সংখ্যার নিরিখে অনেক পিছিয়ে থাকা বিরোধীদের কথা কেন শুনব বলে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দেড় দশক পরে বিরোধী সিপিএম রাজ্যের পঞ্চায়েতে গ্রাম সংসদের প্রক্রিয়া নিয়মিত করে ‘আমি’ থেকে ‘আমরা’র ভাবনায় ফিরতে চায়! তাদের মতে, ব্যক্তিকেন্দ্রিক না হয়ে পঞ্চায়েতের ব্যবস্থা হওয়া উচিত সমষ্টির ভাবনা-চালিত।

Advertisement

সিপিএম সূত্রের খবর, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে মাথায় রেখে একটি খসড়া নোট তৈরি করেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। পঞ্চায়েত ভোটে জনতার উদ্দেশে আবেদনের পাশাপাশি গোটা ব্যবস্থা ও তার বর্তমান হাল নিয়ে দলের ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে ৭ পাতার ওই খসড়ায়। দলের রাজ্য কমিটিতে আপাতত দেওয়া হয়েছে ওই নোট। তার উপরে মতামত দিয়ে জেলা থেকে রাজ্য কমিটির সদস্যেরা খসড়া আবার জমা দিচ্ছেন রাজ্য দফতরে। যাবতীয় মতামত ও সংশোধনী নিয়ে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব আলোচনা করে ‘আবেদন’ চূড়ান্ত করবেন। ওই খসড়াতেই বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে গ্রাম সংসদের মাধ্যমে পঞ্চায়েত পরিচালনার প্রক্রিয়া ‘পুনঃস্থাপনে’র উপরে।

খসড়া নোটে বলা হয়েছে, পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি মানুষের সমষ্টিগত ভাবনার বিকাশ ঘটেছিল। আগেও ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা হতো কিন্তু এলাকায় গণ-উদ্যোগের আলাদা ভূমিকা ছিল। সেই ভাবেই সাক্ষরতা অভিযান কার্যকর করা গিয়েছিল। খসড়ার বক্তব্য: ‘এই পরিবেশকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে ২০১১ পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ‘আমি কী পেলাম বা কী পেলাম না’— এই ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়াটাই প্রকট ভাবে সামনে আনা হয়েছে। চেষ্টা হয়েছে আত্মকেন্দ্রিক ও ভোগবাদী মানসিকতার বিকাশের। পরিতাপের বিষয়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও প্রায়শই বলেন, আমিই দিচ্ছি বা আমিই দেব’। পঞ্চায়েতে বামেরা ক্ষমতা পেলে গ্রাম সংসদের সভা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, এই আশ্বাস দিয়ে খসড়া আবেদনে বলা হয়েছে: ‘এই আমলে গ্রাম সংসদ সভা হয় না। জনগণের অংশগ্রহণ বা মতামত দেওয়ার সুযোগ নেই। উপভোক্তা ঠিক হচ্ছে অর্থের বিনিময়ে বা দলীয় আনুগত্য বিচারে। সমষ্টিগত ভাবনার ক্ষেত্রটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ার পরিবর্তে ক্ষমতা চূড়ান্ত ভাবে কেন্দ্রীভূত হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী, জেলাশাসক এবং বিডিও, মূলত এই তিন স্তরে’।

Advertisement

এই বিষয়ে অবশ্য তৃণমূলের নেতা তাপস রায়ের মত, ‘‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভাবনা খানিকটা বেড়েছে ঠিকই। তবে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা মূলত একই রকম আছে। আর বিকেন্দ্রীকরণ বা কেন্দ্রিকতার প্রশ্নটা বিষয়ভিত্তিক। কোনও জায়গায় বা বিষয়ে কাজ না হলে, সমস্যা হলে কেন্দ্রীয় ভাবে দফতরকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। সর্বোপরি মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত সক্রিয়। তিনি নিজেই নজর রাখেন।’’

দুর্নীতি এবং লুটপাটের হাত থেকে বাঁচিয়ে ‘জনগণের পঞ্চায়েত’ ফেরানোর ডাক দিয়েই এ বার ভোটে যাচ্ছে সিপিএম। পঞ্চায়েতের জন্য তাদের বিকল্প কর্মসূচির মধ্যে গ্রাম সংসদ ফেরানোর পাশাপাশিই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য গ্রাম শিক্ষা কমিটির ব্যবস্থা এবং ভূমিহীন কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ডের প্রকল্প, দুই-ই পুনরায় চালু করার কথা বলা হয়েছে। সিপিএমের দাবি, বাম আমলে ওই প্রভিডেন্ট ফান্ডের প্রকল্পে যুক্ত হয়েছিলেন ২৫ লক্ষ ক্ষেতমজুর। এখন প্রকল্প বন্ধ, এমনকি, মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। পঞ্চায়েতে দায়িত্ব পেলে টাকা ফিরিয়ে প্রকল্প ফের জিইয়ে তোলার আশ্বাস রয়েছে খসড়া আবেদনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement