Women Protest

মহিলা মন এ বার ঘুরবে কি, নজর রাখছে, সিপিএম

রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক উদ্যোগে মহিলাদের বড় অংশের নেমে আসা তাঁদের জন্য চিন্তার কারণ কি না, সে প্রশ্নে তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য মন্তব্যে নারাজ।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৪ ০৭:১৬
Share:

আর জি কর-কাণ্ডে যাদবপুরের হালতুতে সিপিএম ও কংগ্রেসের যৌথ প্রতিবাদ মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।

সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে হাওড়ার তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যাভবনের প্রতিবাদের ছবি। যেখানে প্রতিবাদী ছাত্রীদের সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষিকা দৃঢ় কণ্ঠে বলছেন, ‘‘রাষ্ট্র যদি ভেঙে পড়ে, তা হলে ১৮ বছরের নীচের মানুষটাকেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’ স্কুলের পড়ুয়াদের প্রতিবাদে শামিল হওয়া উচিত কি না, এই নিয়ে বিতর্কের মাঝেই ওই শিক্ষিকাকে তাঁর ছাত্রীদের উদ্দেশে পরামর্শ দিতে শোনা যাচ্ছে, অন্যায় কারও সঙ্গে হলেই সেই ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়াতে হবে। যে উল্টো পক্ষে আছে, তার সঙ্গে অন্যায়-অবিচার হলেও প্রতিবাদ করতে হবে।

Advertisement

শিক্ষিকার ওই স্পষ্টবাদিতার ছবি সমাজমাধ্যমে শেয়ার করেছেন সিপিএমের যুব সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়-সহ রাজনৈতিক চরিত্রদের অনেকেই। আর জি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে সমাজের নানা অংশ যে ভাবে প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছে, তার অন্যতম দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের ছবি। রাজনৈতিক উদ্যোগের পাশাপাশি শিক্ষা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের মহিলারা যে ভাবে সরব হচ্ছেন এবং রাস্তায় নামছেন, তাতে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা সমর্থনের ভিতে ফাটল ধরানোর পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছে বামেরা। সব প্রতিবাদকে রাজনৈতিক ছাতার তলায় না-এনেও সিপিএম নেতৃত্ব চাইছেন আন্দোলনের মঞ্চকে বড় করতে। যাতে ভবিষ্যতের লড়াইয়ের জন্য রসদ তৈরি করা যায়।

বাম শিবিরের মতে, শাসক তৃণমূলের রাজনৈতিক শক্তি এবং নির্বাচনী সাফল্যের পিছনে বড় ভূমিকা থেকেছে মহিলাদের। সরকার ও দলের নেতৃত্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থাকা এবং ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-সহ কিছু জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের কারণে মহিলা অংশের সমর্থনের ফায়দা তৃণমূল পেয়েছে। আর জি করের ঘটনার পরে নানা অংশের বিরাট সংখ্যক মহিলাদের সেই মমতার সরকারের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসা ভবিষ্যতের জন্য অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে বাম নেতৃত্বের মত। সিপিএমের মহিলা সংগঠন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষের কথায়, ‘‘নির্বাচনী লক্ষ্যের দিক থেকে আমরা বিষয়টা ভাবছি না। কামদুনি, ধূপগুড়ি, মধ্যমগ্রাম-সহ একের পর এক ঘটনায় বিচার না পেতে পেতে তার পরে এখানে এসে দাঁড়িয়েছে। সুরক্ষা এবং বিচারের দাবিতে যে ভাবে মহিলারা এগিয়ে এসেছেন, সেটা অভূতপূর্ব। আরও বেশি মহিলা ও শ্রমজীবী মানুষকে যোগ করে আন্দোলনের মঞ্চ আমরা আরও বড় করতে চাই।’’

Advertisement

যাদবপুরে ধর্না-অবস্থান এসএফআই, ডিওয়াইএফআই এবং গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির। —নিজস্ব চিত্র।

রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক উদ্যোগে মহিলাদের বড় অংশের নেমে আসা তাঁদের জন্য চিন্তার কারণ কি না, সে প্রশ্নে তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য মন্তব্যে নারাজ। দলের মিডিয়া কমিটির সদস্য কুণাল ঘোষের মতে, এটা মহিলা সংগঠনের বিষয়। তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও ‘দলের নির্দেশ’ না পাওয়া পর্যন্ত মুখ খুলছেন না। তবে শাসক দলের এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘একটা বিষয়ে মহিলারা প্রতিবাদ করছেন মানে তাঁরা একেবারে সরকারের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছেন, এই রকম ধরে নেব কেন?’’

এ বারের লোকসভা নির্বাচনের আগে দীপ্সিতা ধর, সোনামণি মুর্মু বা সায়রা শাহ হালিমের মতো সিপিএমের মহিলা প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কনীনিকা, মীনাক্ষীরা ঘোষণা করেছিলেন, বাম প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে তাঁদের সাংসদ তহবিলের একাংশ মহিলাদের কল্যাণমূলক কাজ এবং নারী সুরক্ষার প্রশিক্ষণে কাজে লাগানো হবে। সেই ঘোষণা ভোটে তেমন ফল দেয়নি। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিষয়টা আবার সামনে আসছে। একই সঙ্গে আর জি করের ঘটনার পরে রাজ্য সরকারের তরফে নাইট শিফ্‌টে মহিলাদের পারতপক্ষে কম বা না-রাখার যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তাকেও হাতিয়ার করছে বামেরা। কনীনিকার বক্তব্য, ‘‘সুরক্ষার প্রশিক্ষণের বন্দোবস্তের কথা আমরা বলেছি। কিন্তু তাই বলে ব্যাগে পেপার স্প্রে নিয়ে মহিলাদের বেরোতে হবে এবং আত্মরক্ষার ব্যবস্থা মহিলাদেরই করতে হবে, এটা কোনও সমাধান হতে পারে না! রাতের কাজ নিয়ে সরকার যা বলেছে, সেটাও শ্রমজীবী মানুষ এবং মহিলারা কেউই মেনে নিতে পারেন না। নারী নির্যাতনের বিচার এবং এই মনুবাদী চিন্তার বিরুদ্ধে আরও বড় আকারে প্রতিবাদ হবে।’’ সিপিএম নেত্রীর সংযোজন, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার বা এই রকম কোনও প্রকল্পের সঙ্গে কর্মসংস্থান তৈরির কিন্তু কোনও বিরোধ নেই। আর্থিক সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে মানেই কর্মসংস্থানের আর দরকার হবে না, এটা হয় না। এই কথাটাও আমরা স্পষ্ট করে বলছি।’’

আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে তাঁর দেহ বার করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে বাধা দিয়েছিলেন মীনাক্ষীর নেতৃত্বে সিপিএমের যুব নেতা-কর্মীরা। প্রতিবাদের শুরু সেখানেই। তার পর থেকে মহিলা সংগঠন তো বটেই, বামেদের ছাত্র ও যুবদের আন্দোলনেও বহু মহিলা মুখ রয়েছে। এই পরিস্থিতি কাজে লাগাতে চায় সিপিএম। মীনাক্ষী বলছেন, ‘‘সেই ৯ তারিখ থেকে আমাদের ছাত্র, যুব ও মহিলারা আর জি করের ঘটনা নিয়ে রাস্তায় আছেন। ঘটনার বিচার, অপরাধীদের শাস্তির দাবি এবং দুর্নীতির প্রতিবাদে গোটা রাজ্যের মা-বোনেরা যে ভাবে পথে নেমেছেন, সেই বিরাট লড়াইকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement