স্মরণেও ‘ব্রাত্য’ অনিল, নিষেধে নারাজ সুশান্ত

বিতর্কের সূত্রপাত হুগলি জেলায়। আরামবাগের প্রয়াত প্রাক্তন সাংসদ অনিল বসুর উদ্যোগে এক সময়ে চালু হয়েছিল হুগলি-চুঁচুড়া বইমেলা।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৯
Share:

সুশান্ত ঘোষ এবং অনিল বসু।—ফাইল চিত্র।

এক জন প্রয়াত। অন্য জন ব্রাত্য। দু’জনের সংযোগে অশনি সঙ্কেত দেখে হঠাৎ সক্রিয় হল সিপিএম! জানিয়ে দেওয়া হল, বহিষ্কৃত কোনও নেতার স্মরণ অনুষ্ঠানেও পার্টি সদস্যদের অংশগ্রহণ নিষেধ। এমন অবস্থান ঘিরে দলে ফিরে এল প্রবল বিতর্ক।

Advertisement

বিতর্কের সূত্রপাত হুগলি জেলায়। আরামবাগের প্রয়াত প্রাক্তন সাংসদ অনিল বসুর উদ্যোগে এক সময়ে চালু হয়েছিল হুগলি-চুঁচুড়া বইমেলা। সেই বইমেলা কমিটিই আগামী ২ অক্টোবর অনিলবাবুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করছে এবং সেখানে তারা প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষকে। মৃত্যুর ৭ বছর আগে বহিষ্কার করা হয়েছিল অনিলবাবুকে, আর গত কয়েক বছরে দলে থেকেও আমল পান না সুশান্তবাবু। এমন অনুষ্ঠানের খবর পাওয়ার পরেই হুগলি জেলা সিপিএম সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলা থেকে শাখা কমিটি পর্যন্ত দলীয় সদস্যদের ‘সতর্ক’ করে জানিয়ে দিয়েছে, ‘কোনও বহিষ্কৃত পার্টি সদস্যের মৃত্যু বা জন্মদিবসে পার্টি সদস্যদের অংশগ্রহণ করা যায় না। তিনি (অনিল) মৃত্যুদিন পর্যন্ত বহিষ্কৃত ছিলেন’।

সিপিএম সূত্রের খবর, রাজ্য পার্টির সম্মতি সাপেক্ষেই এমন ‘সতর্ক-বার্তা’ জারি করেছেন দলের হুগলি জেলা নেতৃত্ব। আলিমুদ্দিনের মতে, নির্দিষ্ট পরিস্থিতির নিরিখে ‘বিশৃঙ্খলা’ ঠেকাতে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এমন অবস্থানকে রীতিমতো ‘তালিবানি’ আখ্যা দিয়ে দলের অন্দরে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। আর এক বহিষ্কৃত নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পরবর্তী ঘটনার কথা তুলছেন কেউ কেউ। আবার অনেকের মত, অনিলবাবু এখন অতীত। আসলে সুশান্তবাবুকে আটকানোর জন্যই এমন তৎপরতা!

Advertisement

প্রশ্ন করা হলে সুশান্তবাবু বলেছেন, ‘‘মৃত্যুর পরেও কারও সম্পর্কে এমন অবস্থান নেওয়া অমানবিক। উদ্যোক্তারা আমাকে আমন্ত্রণ করেছেন, আমি ওখানে যাব।’’ প্রাক্তন এই মন্ত্রী হুগলি জেলা সিপিএমের এক্তিয়ারে পড়েনও না। তিনি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য।

অনিলবাবুর মৃত্যুর মাসদুয়েক আগে প্রয়াত হয়েছিলেন সোমনাথবাবু। নানা সংগঠনের আয়োজনে তাঁর স্মরণ-সভায় হাজির ছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো থেকে জেলার নেতারা। সেই উদাহরণ দিয়েই এখনকার ‘সতর্কতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন দলের অনেকেই। তা ছাড়া, বহিষ্কৃত হলেও অনিলবাবু আমৃত্যু ছিলেন কমিউনিস্ট পরিভাষায় ‘পার্টিজান’। গত বছরই হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে প্রকাশ কারাটের দলিলের বিরোধিতা করে সংশোধনী পাঠিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী ‘লাল সেলাম’ জানিয়ে লিখেছিলেন, বহিষ্কারের পরে কোনও অসতর্ক মুহূর্তেও অনিল দলের সমালোচনা করেননি। অথচ দলের অনেক সদস্য নির্দ্বিধায় বহু নেতার সমালোচনা করে চলেছেন! শ্যামলবাবুর সে দিনের মন্তব্য উদ্ধৃত করে দলের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এখন কি সব ‘মিথ্যা’ হয়ে গেল!

তবে হুগলি জেলা সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, কয়েক দিন আগে চুঁচুড়ায় দলের জেলা সমাবেশে অনিল-স্মরণ অনুষ্ঠানের প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছিল। ব্যক্তিগত ভাবে যাঁরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন, তাঁরা দলকে ব্যবহার এবং ‘বিশৃঙ্খলা’ তৈরি করতে চাইছেন। এই প্রবণতা ঠেকানো দরকার। হুগলির প্রাক্তন জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘বহিষ্কৃত কাউকে শ্রদ্ধা বা ভালবাসার অধিকার যেমন কারও আছে, না করার অধিকারও তো আছে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement