ছবি: সংগৃহীত।
আম জনতার দরবারের তুলনায় দলের বৈঠকেই বেশি ব্যস্ত থাকেন কর্মীরা। আবার সর্বক্ষণ দলের কাজ করার বিনিময়ে দিন চালানোর মতো পর্যাপ্ত টাকাও হাতে পান না তাঁরা। সঙ্কটের সময়ে চাপের মুখে পড়ে এই জোড়া সমস্যা মোকাবিলায় তৎপর হচ্ছে সিপিএম। নতুন করে ভাবনা-চিন্তা হচ্ছে দলের ক্যাডার-নীতি নিয়ে।
এ রাজ্যে তো বটেই, গোটা দেশেই গত লোকসভা নির্বাচনে বেনজির বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল বামেরা। সেই নির্বাচনের ফলকে দলের জনভিত্তি হ্রাসের গুরুতর সঙ্কেত বলে ধরে নিয়ে একাধিক রাজ্য কমিটি এবং দু’দফায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। কলকাতায় চার বছর আগে কেন্দ্রীয় প্লেনামে নেওয়া সিদ্ধান্ত কত দূর রূপায়িত হয়েছে, পর্যালোচনা হয়েছে সে সবেরও। এবং তার ভিত্তিতেই প্রথমে জেলায় জেলায় নির্দেশিকা, পরে পার্টি চিঠি পাঠিয়ে সিপিএম নেতা-কর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জনভিত্তি পুনরুদ্ধার এবং সংগঠনকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে পরিকল্পনার কথা।
এমনই নির্দেশিকায় খোলাখুলি বলা হয়েছে— ‘ঘটনা হল, আমাদের কার্যধারা পার্টির বাইরে প্রসারিত হয় না। জনগণের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা, এবং তার পরে এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে স্লোগান স্থির করে তাদের কাছে ফিরে যাওয়া, এটাই হওয়া উচিত আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি’। স্তালিনের আমল থেকে ‘লৌহপর্দা’র জন্য বহুচর্চিত দল এখন আত্মসমালোচনার সুরে এমনও বলছে—‘আমাদের বহু ক্যাডার তাদের সময় ও শক্তির অনেকটাই কমিটির সভায় উপস্থিত হওয়া, পার্টির পরবর্তী স্তরের সভায় উপস্থিত হওয়া, গণসংগঠনের সভা ও সাধারণ সভায় ব্যয় করে! পার্টির পরিধির বাইরে যথেষ্ট পরিমাণে সাধারণ জনগণ ও ব্যক্তির সঙ্গে তারা দেখা করে না। এই ধরনের কাজের স্টাইলের পরিবর্তন ঘটাতে হবে’।
আরও পড়ুন: মাঘ মেলায় রসিদ কেটে টাকা আদায়ের অভিযোগ
কিন্তু দলের মধ্যেই প্রশ্ন আছে, কাজের ধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে এই দুর্দিনে পরিশ্রম করতে নতুন নতুন মুখ উৎসাহী হবে কেন? সর্বক্ষণের কর্মীদের জন্য যে ভাতার ব্যবস্থা সিপিএমে চালু আছে, তা কি আজকের দিনে আদৌ বাস্তবসম্মত? সিপিএম নেতৃত্ব মেনে নিচ্ছেন, ভাতা-কাঠামো ঢেলে সাজা প্রয়োজন। এবং তার জন্য দরকার তহবিলের জোগান! সে জন্যই রাজ্যে রাজ্যে দলকে ভাতার জন্য অর্থসংগ্রহের অভিযানে নামতে বলা হচ্ছে।
সিপিএমের অন্দরের রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও দলের বিবাহিত সর্বক্ষণের কর্মী বিহারে তিন বা ঝাড়খণ্ডে চার হাজার টাকা মাসিক ভাতা পান। হিন্দিভাষী রাজ্যের মধ্যে দিল্লিতে ভাতা একটু ভাল— মাসে ১১ হাজার। আবার কোনও দিন ক্ষমতায় না এসেও অন্ধ্রপ্রদেশ বা তেলঙ্গানা এর চেয়ে ভাল ভাতা দেয়। ভাতার এই বিন্যাস নতুন করে সাজিয়ে আরও সর্বক্ষণের কর্মী বাড়ানোর কথা বলছে সিপিএম। নজর দেওয়া হচ্ছে অর্থ সংগ্রহে।
দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘শুধু ভাতার পরিমাণের প্রশ্ন নয়। ক্যাডার-নীতি নিয়েই নতুন করে ভাবা হচ্ছে। কলকাতা প্লেনামে যে ‘পার্টি উইথ মাস লাইন’ গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছিল, তাকে কার্যকর করতে গেলে অনেক পরিবর্তনই করতে হবে।’’ এই ‘গণলাইন’-এর কথা মাথায় রেখেই সামাজিক মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে ভারী ভারী তাত্ত্বিক শব্দ (পার্টি জারগন) পরিহার করে চলতে কর্মীদের পরামর্শ দিচ্ছে সিপিএম!