মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
আরএসএসেও ভাল মানুষ আছেন। আরএসএস এত খারাপ ছিল না, তারা এত খারাপ বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে পাল্টা আক্রমণে নামল সিপিএম।
নবান্নে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী আরএসএস সম্পর্কে ‘এত খারাপ নয়’ মন্তব্য করেছিলেন। তারই সূত্রে বৃহস্পতিবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে! আমরা গোড়া থেকেই বলে আসছি যে, তৃণমূল হল আরএসএসের সৃষ্টি করা দল। এখন সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে। আরএসএস ‘এত খারাপ নয়’, এই সার্টিফিকেট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে কাদের রাজনীতি রূপায়ণ করছেন মুখ্যমন্ত্রী?’’
আলিমুদ্দিনে এ দিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই আগে বলেছিলেন যে, আরএসএস একটি ‘দেশপ্রেমিক’ সংগঠন। তখন বাংলা থেকে সিপিএমকে নিকেশ করার জন্য তাঁর আরএসএস-কে প্রয়োজন ছিল। সেলিমের কথায়, ‘‘এখন গোটা দেশ আরএসএসের ফ্যাসিবাদী আক্রমণ দেখছে, গণতন্ত্র ধংস করা হচ্ছে। বিরোধীদের, এমনকি, সাংবাদিকদেরও জেলে পোরা হচ্ছে। তখনও মুখ্যমন্ত্রী আরএসএস-কে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন! কাদের রাজনীতি রূপায়ণ করার জন্য তিনি এই সার্টিফিকেট দিচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে তাঁকে এর জবাব দিতে হবে!’’ তাঁর অভিযোগ, আরএসএস যে ভাবে সর্বত্র ধর্মকে রাজনীতির মিশ্রণ ঘটিয়ে একটা টানেলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছে, তৃণমূল নেত্রীও সে ভাবে ‘টানেল ভিউ’ দেখাতে চাইছেন। সেলিমের মন্তব্য, ‘‘আরএসএস তাঁকে বলে দিয়েছিল, দুর্গা তিনি। আর তিনি সেই দুর্গার ভূমিকা পালন করছেন!’’
সিপিএমের এই আক্রমণের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের নেতা তাপস রায় অবশ্য বলেন, ‘‘সব সংগঠনই তো এই সমাজ থেকেই তৈরি। এই সমাজের অংশ। মুখ্যমন্ত্রী কোন প্রেক্ষিতে বলেছেন, তা আমি বলতে পারব না। তবে সর্বত্রই ভাল ও খারাপ, দুই-ই থাকে। সিপিএমেও কি ভাল লোক নেই? দু-এক জন নিশ্চয়ই আছেন!’’
শুধু সিপিএম-ই নয়, মমতার মন্তব্য নিয়ে সরব হয়েছেন এমআইএম নেতা ও সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসিও। টুইটে এ দিন তাঁর তির্যক মন্তব্য, ‘‘সেই ২০০৩ সালে মমতা আরএসএস-কে ‘দেশপ্রেমিক’ আখ্যা দিয়েছিলেন। আরএসএস তাঁকে বলেছিল ‘দুর্গা’। আরএসএস চায় হিন্দু রাষ্ট্র। গুজরাতের হিংসার পরে সংসদে তৃণমূল নেত্রী এনডিএ সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। আশা করব, তৃণমূলের সংখ্যালঘু মুখ যাঁরা, তাঁর সততা ও ধারাবাহিকতার প্রশংসা তাঁরা করবেন!’’
কলকাতায় এ দিনই সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী দিবস উপলক্ষে শান্তি মিছিল ছিল বাম শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকে। মিছিলে শামিল হয়েছিল বাম ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠনও। দুর্গাপুজো উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর শোভাযাত্রার পরে যানজট বেধে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, এই কারণ দেখিয়ে এন্টালির রামলীলা পার্ক থেকে বিকালে তাঁদের মিছিল শুরুর সময়ে পুলিশ বাধা দেয় বলে বাম নেতৃত্বের অভিযোগ। বচসা, টানাপড়েনের পরে শেষ পর্যন্ত অবশ্য পার্ক সার্কাস পর্যন্ত মিছিল হয়। মিছিলে লোক ছিল চোখে পড়ার মতোই। সেলিম বলেন, ‘‘বিরোধীরা মিছিল করতে গেলে অনুমতি নেই। এক দিকে সরকারি শোভাযাত্রা হচ্ছে, অন্য দিকে যুদ্ধ-বিরোধী দিবসে প্রতি বার যে মিছিল হয়, তাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বর্ধমানে বুধবার আমাদের মিছিলে কাঁদানে গ্যাস, জলকামান চালিয়ে নেতা-কর্মীদের অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্ধমানের ঘটনার জেরে ও ধৃতদের মুক্তির দাবিতে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে সিপিএম।