বাংলার চাপে পলিটব্যুরো থমকাল, খোঁজ মধ্যপথের

প্রবল বিরোধিতার মুখে পলিটব্যুরোয় মাটি কামড়ে পড়ে থাকল বঙ্গ সিপিএম! প্রায় ৬ ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকের পরে তাই জোট-প্রশ্নে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারল না পলিটব্যুরো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫৯
Share:

পলিটব্যুরোর বৈঠকে সিপিএম নেতারা। মঙ্গলবার দিল্লিতে। — নিজস্ব চিত্র

প্রবল বিরোধিতার মুখে পলিটব্যুরোয় মাটি কামড়ে পড়ে থাকল বঙ্গ সিপিএম! প্রায় ৬ ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকের পরে তাই জোট-প্রশ্নে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারল না পলিটব্যুরো।

Advertisement

কংগ্রেস-সহ ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট করার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি এবং পাল্টা যুক্তির টক্করে শেষ পর্যন্ত ফয়সালার ভার চলে গেল কেন্দ্রীয় কমিটির
হাতে। দিল্লিতে আজ, বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটির দু’দিনের বৈঠক। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সেখানে গোটা ছবিটাই তুলে ধরবেন। তার পরে আলোচনা করে কংগ্রেস-প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলবে কেন্দ্রীয় কমিটিই।

দলের বড় অংশের মতে, প্রথম রাতে পলিটব্যুরোয় ম্যাচ ড্র রেখে ফিরতে পারাই আলিমুদ্দিনের ‘জয়’! কারণ, পার্টি কংগ্রেসের লাইনের সঙ্গে আপস করা যাবে না, এই যুক্তি দেখিয়ে আলিমুদ্দিনের আর্জি এক কথায় খারিজ করে দিতে পারত পলিটব্যুরো। কেরল সিপিএমের দৌলতে পলিটব্যুরোয় দক্ষিণী শিবিরের সংখ্যাগরিষ্ঠতাও স্পষ্ট। এত কিছুর পরেও দীর্ঘ আলোচনা চালিয়ে প্রকাশ কারাটেরা যে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি, তা সম্ভব হয়েছে বাংলার নেতাদের জোরালো সওয়ালের ফলেই। বৈঠক শেষে এ দিন রাতে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘পলিটব্যুরোয় কোনও একটা নয়, একাধিক প্রস্তাব আছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এর পরে কেন্দ্রীয় কমিটিই নেবে। পলিটব্যুরো এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।’’

Advertisement

বঙ্গ ব্রিগেডের এক নেতার কথায়, ‘‘পলিটব্যুরোয় আমাদের পাঁচ গোলে হারা ম্যাচ ছিল! সেটা ড্র রাখা গিয়েছে বাংলার যুক্তি বোঝানো গিয়েছে বলেই।’’ সিপিএম সূত্রের খবর, এ দিন পলিটব্যুরোয় বাংলার সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু ও মহম্মদ সেলিমের পাশে সেই অর্থে ছিলেন বলতে শুধু ত্রিপুরার মানিক সরকার। অন্য দিকে কারাট-পন্থী গোটা দক্ষিণী শিবির। আর দু’পক্ষের যুক্তিকে মেলানোর চেষ্টা করছিলেন স্বয়ং ইয়েচুরি। সূর্যবাবুরা এক সময়ে এমন কথাও বলেন যে, বাংলায় আম জনতা এবং বামপন্থী কর্মী-সমথর্কদের মধ্যে যে চাহিদা তৈরি হয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তা পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ালে ‘অপ্রীতিকর ঘটনা’ ঘটে যেতে পারে। জেলায় জেলায় বাম কর্মীরা নিজেদের তাগিদে কংগ্রেস-সহ ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে ভোটে নেমে যেতে পারেন। তখন সিপিএম নজিরবিহীন সঙ্কটের মুখে পড়বে! প্রবল বিতর্কের পরে কারাটের মতোই বাকি নেতারা শেষ পর্যন্ত মেনে নেন, বাংলার পরিস্থিতি সত্যিই অন্য কোনও রাজ্যের মতো নয়। পলিটব্যুরো বৈঠকের আগে এ কে গোপালন ভবনে ইয়েচুরির সঙ্গে আলাদা করেও আলোচনায় বসেন সূর্যবাবু ও বিমানবাবু।

সিপিএমের একটি সূত্রের ইঙ্গিত, বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে আজ, বুধবার কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম দিনেই বাংলা নিয়ে ফয়সালা হয়ে যেতে পারে। পলিটব্যুরোয় প্রবল যুদ্ধের ইঙ্গিত পেয়ে বাংলার নেতারাও অন্যান্য ছোট রাজ্যের প্রতিনিধিদের বোঝাতে মাঠে নেমে পড়েছেন। যাতে কেন্দ্রীয় কমিটির কোর্টে বল এলে সরাসরি সমথর্ন না করলেও তাঁরা যেন জোট-প্রস্তাবের বিরোধিতা না করেন। দলের মধ্যেই এখন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, কেরলের বাধ্যবাধকতার জন্য বাংলার সিপিএমকে কেন ভুগতে হবে? এই প্রশ্নে যে চাপ বাড়ছে, কেরলের নেতারাও এখন তা বুঝতে পারছেন। সে জন্যই নিজেদের রাজ্যের কথার চেয়েও বেশি করে তাঁরা এখন সেই পার্টি কংগ্রেসের লাইনই শুধু তুলছেন।

দলীয় সূত্রের খবর, এমতাবস্থায় দু’দিক রক্ষা করতে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব একটি মধ্যপন্থা বার করার চেষ্টা করছেন। তাঁদের একাংশ মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বিশাখাপত্তনম পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাইন কিছুটা শিথিল করা যেতে পারে। সরাসরি নির্বাচনী জোটের বদলে কৌশলগত সমঝোতা হোক। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতিতে পশ্চিমবঙ্গে বাম, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির জোটের ডাক দেওয়া যেতে পারে। কংগ্রেসের সম্পর্কে সরাসরি জোটের কথা বলা না হলেও তখন তাদের জন্য দরজা খোলা থাকবে। ঠিক এই কায়দাতেই রাজ্য কমিটিতে কয়েক দিন আগে জোট-প্রস্তাব পাশ করিয়ে নিয়েছে আলিমুদ্দিন। সেখানে বলা হয়েছিল, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ যে সব শক্তি তৃণমূলের সঙ্গে সরাসরি লড়াই করতে আগ্রহী, তাদের সঙ্গে নিতে হবে। এই মধ্যপন্থায় কেরল শিবিরের সায় আদায় করাই এখন ইয়েচুরিদের চ্যালেঞ্জ!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement