প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে সিপিএমের প্লেনাম। শুক্রবার।— নিজস্ব চিত্র
নামে সাংগঠনিক প্লেনাম। কিন্তু বিতর্কের ভবি ভুলবার নয়!
বিধানসভা ভোটে বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা ঠিক হয়েছিল কি না, ফের সেই প্রশ্ন টেনে আনা হল সিপিএমের রাজ্য প্লেনামের মঞ্চেও। কেউ কেউ অভিযোগ করলেন, পার্টি কংগ্রেসের লাইনের বাইরে বেরিয়ে দলের নীতির সর্বনাশ করা হয়েছে! কেউ আবার পাল্টা বললেন, কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে না লড়লেও শোচনীয় দশা হতে পারতো। অথচ এই প্রশ্নে বিস্তর বিতর্ক হয়ে গিয়েছে আগেই!
প্লেনামের মঞ্চ পেয়ে প্রতিনিধিদের একাংশ যে কংগ্রেসের ভূত টেনে আনবেন, আন্দাজ করেছিলেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বও। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং পলিটব্যুরোর সদস্য প্রকাশ কারাট, মানিক সরকার, এম এ বেবি, হান্নান মোল্লাদের উপস্থিতিতেই মহালয়ার সকালে প্লেনামের খসড়া রিপোর্ট পেশ করতে গিয়ে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, কংগ্রেস এবং বিজেপি-র থেকে সমদূরত্বের লাইন বিশাখাপত্তনম পার্টি কংগ্রেসে নেওয়া হয়েঠিল ঠিকই। কিন্তু তার পরে বহু ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যা থেকে বিজেপি-কে বড় বিপদ বলে সহজেই চিহ্নিত করা যাচ্ছে। আর্থিক উদারনীতির প্রশ্নে দু’টি দলের মধ্যে ভেদাভেদ চলে না, এটা সত্যি। তবে তার বাইরেও এমন অনেক কিছু আছে, যা বিজেপি-কে কংগ্রেসের থেকে পৃথক করে দিচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্বের ব্যবহৃত ‘পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স’ কথাটিও তির্যক অর্থে ব্যবহার করেছেন সূর্যবাবু।
পরে প্লেনামের প্রথম দিনের আলোচনায় বেশির ভাগ জেলার প্রতিনিধিরা কংগ্রেস-প্রশ্নে তীব্র বিরোধিতায় না গেলেও কলকাতা, মুর্শিদাবাদের মতো কয়েকটি জেলার প্রতিনিধিরা উল্টো সুর গেয়েছেন। তার মধ্যে সব চেয়ে সরব ছিলেন কলকাতার সুদীপ সেনগুপ্ত। তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেসের হাত ধরা কয়েক জন নেতার আকাঙ্খার পরিণতি মাত্র! এর ফলে পার্টি কংগ্রেসের লাইনের অন্যথা করা হয়েছে। এই নেতারাই তাঁদের প্রিয়পাত্রকে রাজ্যসভার সাংসদ করে পাঠান।
যাঁরা নেতাদের পায়ের কাছে বসে থাকেন, তাঁদের গণসংগঠনের মাথায় বসানো হয়!
উত্তর ২৪ পরগনার সুভাষ মুখোপাধ্যায় আবার প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসর সঙ্গে সমঝোতা-বিরোধীদের কিছু কার্যকলাপ নিয়ে। তাঁর মতে, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কারাট যখনই যা তত্ত্ব দেন, দল মারফতই সে সব দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অথচ সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরির মত সেই প্রচার পায় না। কারাট যে কংগ্রেস-বিরোধী এবং ইয়েচুরি বিজেপি-কে রুখতে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সঙ্গে বৃহত্তর সমঝোতার পক্ষে, এ কথা বাম রাজনীতিতে সুবিদিত।
এই বিতর্কের আগেই প্লেনামের খসড়া দলিলের উপরে জেলা ও রাজ্য কমিটি মিলে সংশোধনী জমা পড়েছে ১০৩৫টি। রাজ্য কমিটির বৈঠকে শুক্রবার সকালে ঝা়ড়াই-বাছাই করে বেছে নেওয়া হয়েছে ৮৮টি। প্লেনামের প্রতিনিধিরা আজ, শনিবার সকাল পর্যন্তও সংশোধনী জমা দিতে পারবেন। সংশোধনী দেওয়ার পাশাপাশিই বর্ধমান জেলার প্রতিনিধিরা প্রশ্ন তুলেছেন, জোনাল কমিটি তুলে দিয়ে এবং লোকাল কমিটি জুড়ে ‘এরিয়া কমিটি’ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিতে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এত তাড়াহুড়ো কেন? আর প্লেনামের মাঝে সূর্যবাবু প্রকাশ্যেই কবুল করেছেন, গত কয়েক দশকে আড়ে-বহরে দলের বৃদ্ধি হলেও গুণগত মান বাড়েনি। সমাজের নানা অংশের মানুষের সঙ্গে যে সংযোগ স্থাপিত হওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি।