বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে আবার এক বাম বিধায়ককে দলে নিল তৃণমূল। বর্ধমানের খণ্ডঘোষের সিপিএম বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ বৃহস্পতিবার তৃণমূলে যোগ দিলেন। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং বর্ধমানের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে নবীনবাবু তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে সিপিএম তাঁকে বহিষ্কার করেছে।
দলবদলের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নবীনবাবু এ দিন বামেদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে বলেন, ‘‘সিপিএম মুখে বলে তারা সর্বহারার দল। কিন্তু এরা কলকাতায় ১২ লক্ষ টাকা খরচ করে প্লেনাম করছে! অথচ মানুষের পাশে থাকছে না। সে জন্যই বামেদের সঙ্গে আর থাকতে চাই না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন-কাজে সামিল হতেই আমার দলবদল।’’ নবীনবাবু তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বলে এর আগেও বেশ কয়েক বার গুঞ্জন উঠেছিল। সিপিএম নেতৃত্ব তখন তাঁকে সরাসরি ডেকে বিষয়টি জানতে চেয়েছিলেন। সিপিএমের প্রতি তাঁর অগাধ নিষ্ঠার আশ্বাস তখন লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন খণ্ডঘোষের বিধায়ক। কিন্তু তার পরেও নবীনবাবুর তৃণমূলে যোগদানের পিছনে প্রলোভনের অঙ্ক কাজ করেছে বলেই সিপিএম জেলা নেতৃত্বের অভিযোগ।
মাসকয়েক আগেই খণ্ডঘোষে বালি খাদানের দখল নিয়ে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর গোলমালে তিন জন খুন হন। এমন প্রকট গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের মধ্যে এক বাম বিধায়ক দলে আসায় গোলমাল আরও বাড়বে বলে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের আশঙ্কা। প্রকাশ্যে অবশ্য তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, নবীনবাবু দলে আসায় বর্ধমানে তৃণমূলের শক্তি বাড়বে। কিন্তু কোচবিহারে ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে বিধায়ক উদয়ন গুহ দলে যোগ দেওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে, সে কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন খণ্ডঘোষের তৃণমূল কর্মীরা। নবীনবাবু অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমি যোগ দেওয়ায় দলে দ্বন্দ্ব বাড়বে না কমবে, তা বলার সময় এখনও আসেনি। আমাকে টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে বলে যে প্রচার করা হচ্ছে, তা-ও ভুল।’’
সিপিএমের হয়ে আগামী বিধানসভায় জিততে না পারার আশঙ্কাতেই দল বদলালেন কি না, প্রশ্নের জবাবে নবীনবাবু বলেন, ‘‘সেটা পরের প্রশ্ন। আগে আমি রাজ্যের উন্নয়নে সামিল হতেই তৃণমূলে এলাম।’’ আর এ প্রসঙ্গ তুলেই সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের বক্তব্য, “নবীনকে নাকি বিধানসভায় প্রার্থী করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওখানে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার জন্য লড়াই করছেন, তাঁরা কি ছেড়ে দেবেন?” গত বিধানসভা ভোটে যাঁকে হারিয়ে নবীনবাবু বিধায়ক হন, খণ্ডঘোষের সেই তৃণমূল নেতা অলোক মাজি এ দিন বলেন, “দলের উচ্চ নেতৃত্ব নবীনবাবুকে দলে নিয়েছেন। আমি আর কী বলব! তবে উনি আরও আগে আসতে পারতেন!”