WB Panchayat Election 2023

অকৃষি প্রকল্পে ‘সহমতে’র কথা এখন বাম আবেদনে

পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য ১২ পাতার ‘বামফ্রন্টের আবেদন’ প্রকাশিত হয়েছে বুধবার। নিয়মিত গ্রাম সংসদ বসিয়ে তৃণমূল স্তরে মানুষের জন্য ‘প্রকৃত স্বশাসন’ দেওয়ার আশ্বাসই বামেদের মূল বক্তব্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৩ ০৭:১৩
Share:

পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য বামফ্রন্টের আবেদন প্রকাশ। মুজফ্‌ফর আহমেদ ভবনে। —নিজস্ব চিত্র।

সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে রাজ্যে রাজনৈতিক জমি হারিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। জমির মালিকের সম্মতি ছাড়াই জমি নেওয়ার সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল আন্দোলন। যার প্রথম প্রভাব পড়েছিল ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে। এখন বিরোধী পক্ষে থাকা বামফ্রন্ট ১৫ বছর পরে আরও একটি পঞ্চায়েত নির্বাচন উপলক্ষে ইস্তাহারে ঘোষণা করল, পঞ্চায়েত এলাকায় অকৃষিজনিত প্রকল্পের ক্ষেত্রে জমি নিতে গেলে ৮০% মানুষের সহমত নিতে হবে। অতীত মনে করিয়ে দিয়ে বামেদের স্বভাবতই খোঁচা দিতে ছাড়ছে না এখনকার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।

Advertisement

পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য ১২ পাতার ‘বামফ্রন্টের আবেদন’ প্রকাশিত হয়েছে বুধবার। নিয়মিত গ্রাম সংসদ বসিয়ে তৃণমূল স্তরে মানুষের জন্য ‘প্রকৃত স্বশাসন’ দেওয়ার আশ্বাসই বামেদের মূল বক্তব্য। সেখানেই বলা হয়েছে: ‘পঞ্চায়েত এলাকায় এবং পঞ্চায়েতের আওতাভুক্ত যে কোনও প্রস্তাবিত প্রকল্প, বিশেষ করে জমি অধিগ্রহণ বা গ্রামীণ জমিতে অকৃষিজনিত প্রকল্পের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৮০% মানুষের সহমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধারা কঠোর ভাবে রূপায়িত হবে। গ্রামীণ জমি প্রত্যক্ষ ভাবে প্রোমোটারকে দিয়ে কিনে নেওয়ার, জমি মাফিয়াকরণের বিরুদ্ধে পরিবর্তিত পঞ্চায়েত গড়বে’। গ্রামভিত্তিক পরিযায়ী শ্রমিকদের তালিকা করে জেলা পরিষদে রাখা, আলাদা পোর্টাল চালু করে তাঁদের কল্যাণে কাজ করার কথাও বলা হয়েছে আবেদনে।

অকৃষি-কাজে জমি নেওয়ার ক্ষেত্রে সহমতের ভিত্তিতে এগোনোর প্রশ্নে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের মন্তব্য, ‘‘এই কথাটাই সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন। মানুষের সম্মতি দূরে থাক, আপত্তির কথাও সিপিএম শোনেনি! দমন-পীড়ন চালিয়েছিল। আজ তাদের কথা মানুষ বিশ্বাস করবে কেন?’’ বাম সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই তারা এগোতে চাইছে। তা ছাড়া, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বের পরে দেশে জমি অধিগ্রহণ আইনের কাঠামোও বদলে গিয়েছে।

Advertisement

আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু যে দিন ইস্তাহার বা ‘আবেদন’ প্রকাশ করছেন, ১৯৭৭ সালে এই দিনেই তৈরি হয়েছিল প্রথম বামফ্রন্ট সরকার। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কথা স্মরণ করে বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘বামফ্রন্ট বলেছিল, সরকার মহাকরণে বসে নয়, চলবে গ্রাম থেকে। লুটেরাদের হাত থেকে মুক্ত করে মানুষের হাতে পঞ্চায়েতের প্রকৃত ক্ষমতা তুলে দেওয়াই আমাদের অঙ্গীকার।’’ দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত গড়ার কথাও বারবার এসেছে লিখিত আবেদনে এবং বাম নেতাদের কথায়। অনুষ্ঠানে ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, আরএসপি-র তপন হোড় প্রমুখ।

বামেদের দাবি, মমতার আমলে প্রচার পাওয়া অনেক সামাজিক প্রকল্প শুরু হয়েছিল বাম জমানাতেই। এই ধরনের বেশ কিছু প্রকল্প স্ব্ছ ভাবে চালু রাখার কথা বলেছে বামফ্রন্ট। যে প্রসঙ্গে তৃণমূলের কুণালের কটাক্ষ, ‘‘সরাসরি সাহায্যের বিভিন্ন প্রকল্প এমন ব্যাপক আকার পেয়েছে যে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্প যদি বামেরা চালুও রাখে, তাতে মানুষ তৃণমূলের জেরক্স কেন নেবেন? তৃণমূলকেই নেবেন!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement