‘ইনসাফ যাত্রায়’ মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, মহম্মদ সেলিম, ধ্রুবজ্যোতি সাহা। —সংগৃহীত।
গত ৩ নভেম্বর কোচবিহার থেকে শুরু হয়েছিল সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের ‘ইনসাফ যাত্রা’। উত্তরবঙ্গের সব জেলা ছুঁয়ে সেই যাত্রা দু’দিন আগে মুর্শিদাবাদে প্রবেশ করেছে। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলায় যুব সংগঠনের কর্মসূচিতে যোগ দিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। শুক্রবার মুর্শিদাবাদের ডোমকলেও মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়দের সঙ্গে থাকবেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন হল, এতগুলি জেলা পেরিয়ে আসার পর কেন মুর্শিদাবাদেই যুব সংগঠনের কর্মসূচিতে যোগ দিলেন সেলিম?
আনন্দবাজার অনলাইন আগেই লিখেছিল, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বঙ্গ সিপিএম নির্দিষ্ট কিছু আসনকে ‘ফোকাস’ করে লড়তে চায়। সিপিএমের যে যে আসনে নজর রয়েছে, তার মধ্যে মুর্শিদাবাদ অন্যতম। তবে কি সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই মুর্শিদাবাদে যুবদের কর্মসূচিতে যোগ দিলেন সেলিম?
যে দু’টি জায়গায় সেলিম বৃহস্পতি এবং শুক্রের কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন, সেই ভগবানগোলা এবং ডোমকল— দু’টি বিধানসভাই পড়ে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বাংলায় দু’টি আসনে জিতেছিল সিপিএম। রায়গঞ্জে সেলিম ও মুর্শিদাবাদে বদরদ্দুজা খান। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার দীর্ঘ আলোচনা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়। মুর্শিদাবাদ আসনে ত্রিমুখী লড়াই হয়েছিল। দেখা যায়, মুর্শিদাবাদ প্রথম বারের জন্য জিতে নিয়েছে তৃণমূল। সিপিএমের লোকসভা আসন রাজ্যে সে বার শূন্যে নেমে যায়।
অতীতের কথা মাথায় রেখে সিপিএম এ বার কংগ্রেসের সঙ্গে আগাম আলোচনা সেরে ফেলে সমঝোতা চূড়ান্ত করে ফেলতে চাইছে। তেমনই আলিমুদ্দিন স্ট্রিট মনে করছে, মুর্শিদাবাদ আসন তাদের জন্য উর্বর হবে। সিপিএম নেতাদের একাংশের ব্যাখ্যা, মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের ট্র্যাডিশনাল ভোট রয়েছে। যা অধীর চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণে। আবার ডোমকল, ভগবানগোলা, হরিহরপাড়ার মতো বেশ কিছু এলাকায় সিপিএমের নিজস্ব সাংগঠনিক শক্তিও রয়েছে। সবটাকে এক জায়গায় করেই মুর্শিদাবাদ নিয়ে আশাবাদী সিপিএম। অনেকের মতে, সেই কারণেই সেলিম পর পর দু’দিন সেখানে সময় দিচ্ছেন। পাশাপাশি, পঞ্চায়েত ভোটের ফলের কথাও মাথায় রাখছেন সিপিএম নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, মুর্শিদাবাদ লোকসভার মধ্যে বহু জায়গায় বামেদের ভোট ৩০ শতাংশ ছুঁয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে। সেই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করেই মুর্শিদাবাদকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে চাইছে সিপিএম।
বৃহস্পতিবার ভগবানগোলায় একটি সভায় ভাষণ দেন সেলিম। সেই সভায় ভিড়ও হয়েছিল ভাল। তার পর মিনাক্ষীদের সঙ্গে কয়েক কিলোমিটার হাঁটেন তিনি। সিপিএম সূত্রে খবর, রায়গঞ্জে যখন ইনসাফ যাত্রা ছিল, তখন সেখানেই সেলিমকে যোগ দিতে অনুরোধ করেছিলেন যুব নেতৃত্ব। কিন্তু ৭-৮ নভেম্বর সেখানে যাননি সেলিম। আগেই বাঁকুড়ায় সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের কর্মসূচি নির্ধারিত ছিল। তার উপর লোকসভায় তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়ে যাতে গুঞ্জন না-তৈরি হয়, সে কারণেও রায়গঞ্জের কর্মসূচি তিনি এড়িয়ে যান বলে দলীয় সূত্রে খবর। কারণ ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সেলিম ছিলেন রায়গঞ্জের সাংসদ। আবার তিনি সেখানে পথে নামলে অনেকেরই কৌতূহল তৈরি হতে পারত, ২০২৪-এ আবার তিনি প্রার্থী হবেন কি না। সেই সুযোগ রাখেননি সেলিম। তার বদলে বেছে নেন মুর্শিদাবাদকেই।