ছিটমহলে সুজন চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র
দিনহাটায় সাবেক ছিটমহলবাসীদের অস্থায়ী সেটলমেন্ট ক্যাম্পে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। সোমবার তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তারাপদ বর্মণ, এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটির সদস্য শুভ্রালোক দাস প্রমুখ।
এ দিন সুজন ক্যাম্পে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন। ক্যাম্পে থাকা বাসিন্দাদের অনেকেই তাঁদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। প্রবীণ ব্যক্তি নারায়ণচন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘‘ছিটমহল বিনিময়ের সময় আমাদের নানা ভাবে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। ফেলে আসা জমির যেমন উপযুক্ত মূল্য দেওয়া হবে তেমনি এখানে আসার পরে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরু করে কাজকর্ম সব কিছুই দেওয়া হবে। চুক্তি অনুযায়ী টাকা বরাদ্দ হলেও রেশনের সামান্য চাল, ডাল পেলেও অন্য কিছুই মেলে না। খুব কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।’’
একই ভাবে তাঁদের সমস্যার কথা সুজনের সামনে তুলে ধরেন মফিজউদ্দিন, কৃষ্ণ অধিকারী, সুমিত্রা বর্মণ, আব্দুল গনি প্রমুখেরা। ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, চার বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁদেরকে নানা রকম ভাবে সরকারি ‘প্যাকেজ’ দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হলেও আজও কোনও রকম সরকারি সুযোগ-সুবিধা মেলেনি বললেই চলে। চুক্তি অনুযায়ী সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকার টাকা বরাদ্দ করলেও তাঁদের কোনও সুরাহা হয়নি। মাসে পরিবার পিছু ৩০ কেজি চাল, ৫ কেজি মসুর ডাল, ৫ লিটার কেরোসিন, ৫ লিটার সরিষার তেল, এক প্যাকেট লবণ, এক প্যাকেট মিল্ক পাউডার দেওয়া ছাড়াও আর কিছুই দেওয়া হয় না। সরকারি কোনও সুযোগ-সুবিধা, এমনকি জবকার্ড থাকা সত্ত্বেও মেলেনি তাঁদের কাজ। এমন অবস্থায় তাঁদের জন্য যে ঘর তৈরি করা হচ্ছে সেই ঘরও অত্যন্ত নিম্নমানের জিনিস দিয়ে তৈরি হচ্ছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। যদি তাঁরা ওপারে থাকা সম্পত্তির কোনও সুরাহা না পান তবে তাঁরা নতুন ঘরে যাবেন না বলেও জানান।
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী জানান, তিনি বিধানসভায় এ ব্যাপারে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দেন, সব হয়ে গিয়েছে। একদিকে, কেন্দ্রীয় সরকার অন্যদিকে রাজ্য সরকার এই দুই সরকারের দায়িত্ব থাকলেও তাঁরা কোনও কিছুই করছে না। এ নিয়ে তিনি ফের বিধানসভায় সরব হবেন।
অভিযোগ, ওই ক্যাম্পে মাত্র ৫৮টি পরিবার এখানে থাকলেও রেশন ছাড়া কোনও কিছুই সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। রেশনের সামান্য জিনিস দিয়ে চার-পাঁচ জনের সংসার চালানো খুবই কষ্টকর। সুজন জানান, এ নিয়ে তিনি রাজ্য সরকারকে বলার পাশাপাশি রাজ্যপালকে একাধিক বার বলেছেন। তা সত্ত্বেও দুই সরকার সম্পূর্ণ নির্বিকার। এই মানুষগুলিকে নিয়ে এসে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ সিপিএমের রাজ্য নেতার।
দিনহাটা ১ বিডিও সৌভিক চন্দ বলেন, ‘‘সেটলমেন্ট ক্যাম্পে থাকা পরিবারগুলোর জন্য দিনহাটার হিমঘর এলাকায় ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে। কাজও প্রায় শেষের দিকে। খুব শীঘ্রই ফ্ল্যাটগুলো পরিবারগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হবে।