—ফাইল চিত্র।
সীতারাম ইয়েচুরিকে প্রার্থী করার প্রস্তাব খারিজ হয়ে গিয়েছে দলের আপত্তিতে। কিন্তু বাংলা থেকে রাজ্যসভার একটি আসনে বাম শিবির থেকেই প্রার্থী করতে চায় সিপিএম। জোটের সমর্থন দিয়ে সেই প্রার্থীর রাজ্যসভায় যাওয়া যাতে নিশ্চিত হয়, তার জন্য কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গাঁধীর সঙ্গে কথা বলছেন স্বয়ং ইয়েচুরিই। আগামী বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে জোটে চিড় ধরানো যে সমীচীন হবে না, সেই যুক্তিতে এখনও পর্যন্ত একমত বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব।
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর নির্দেশে রাজ্যসভা সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার পড়েছে রাহুলের উপরে। রাহুল যোগাযোগ করেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে। ইয়েচুরি নিজে প্রার্থী হলে তাঁকে সমর্থন দিতে কংগ্রেসের কোনও আপত্তি ছিল না। তবে তাঁর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নাকচ হয়ে যাওয়ার পরেও প্রদেশ কংগ্রেস কোনও প্রার্থীর নাম সুপারিশ করেনি। সূত্রের খবর, বিকল্প প্রার্থী হিসেবে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের নামে তাঁদের যে আপত্তি নেই, সেই বার্তা রবিবারই ইয়েচুরিকে দিয়েছেন বাংলার কংগ্রেস নেতৃত্ব। এর পরে ইয়েচুরি ও রাহুল কথা বলে প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেলবেন বলে জোট শিবিরের আশা।
সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘বাংলা থেকে সংসদের কোনও কক্ষেই এখন কোনও বাম প্রতিনিধি নেই। রাজ্য থেকে আগের দু’বার রাজ্যসভায় গিয়েছেন কংগ্রেসেরই দু’জন। এ বার তাই বাম প্রতিনিধিকে রাজ্যসভায় পাঠানোই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত হবে।’’ প্রার্থী অপছন্দ না হলে বাম প্রতিনিধি পাঠাতে কংগ্রেসেরও দ্বিমত নেই।
আরও পড়ুন: রত্নার উত্থানে আগুনে ঘি! শোভন শিবিরে তৎপরতা, আসরে বিজেপি-ও
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র, বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও প্রদেশ সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য দিনভর দফায় দফায় কথা বলেছেন রাজ্যসভার জট ছাড়াতে। কথা হয়েছে এআইসিসি-র নেতাদের সঙ্গেও। প্রদেশ নেতারা কেউই কোনও প্রার্থীর নাম সুপারিশ না করে দিল্লির উপরেই সিদ্ধান্তের ভার ছেড়েছেন। অন্য দিকে, আলিমুদ্দিনের তরফে বিকাশবাবুর কথা জানানো হয়েছে ইয়েচুরিকে। সন্ধ্যায় ইয়েচুরির সঙ্গে কথা হয়েছে প্রদীপবাবুর। দক্ষিণ ভারত থেকে দিল্লি ফিরে ইয়েচুরি ফের রাহুলের সঙ্গে কথা বলবেন। সোমেনবাবু আবার ব্যক্তিগত আমন্ত্রণ রক্ষা করতে সন্ধ্যায় রওনা দিয়েছেন অজমেড়। বিকাশবাবুকে নিয়ে একান্তই কোনও সমস্যা হলে সুপ্রিম কোর্টের এক প্রাক্তন বিচারপতির নাম বিবেচনায় রাখা আছে।
তিন বছর আগে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার বাইরে গিয়েই বিকাশবাবুকে রাজ্যসভায় প্রার্থী করেছিল সিপিএম। সে বার অবশ্য শেষ সময় ফুরনোর কয়েক সেকেন্ড পরে তাঁর অতিরিক্ত হলফনামা জমা পড়ায় বিকাশবাবুর মনোনয়ন খারিজ করে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এ বার জয়ের পথ নিশ্চিত হলে তবেই দাঁড়াবেন বিকাশবাবু, এমন ইঙ্গিত পেয়ে আসরে নেমেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। অঙ্কের হিসেবে, দলত্যাগী বিধায়কদের বাদ দিয়েও বাম (২৬) ও কংগ্রেসের (২৮) মিলিত ভোটে বিকাশবাবুর জয় সম্ভব। সে ক্ষেত্রে চার প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করেও তৃণমূলের অতিরিক্ত ভোটের চেয়ে জোটের ভোট বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু সব ভোট ‘অটুট’ থাকবে কি না, সেটাই হবে জোট শিবিরের পরীক্ষা! বিজেপির নির্বাচিত ৬ এবং ওই দলে যোগ দেওয়া ১০ জন (মোট ১৬) বিধায়কের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।