বাইরন বিশ্বাস। —ফাইল চিত্র।
সাগরদিঘিতে জোটের জেরে জিতে কংগ্রেসের বিধায়ক দলবদল করলেও একসঙ্গে লড়াইয়ের রাজনৈতিক যুক্তি ফুরিয়ে যাচ্ছে না বলে মনে করছে সিপিএম। দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকের শুরুতেই এই অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তবে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে জেলায় জেলায় কংগ্রেসের মনোভাব অনেক ক্ষেত্রেই যে ‘বাস্তবসম্মত’ নয়, সেই রিপোর্টও উঠে এল একই বৈঠকে।
আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে সিপিএমের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক। সাগরদিঘির বিধায়ক বাইরন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে শাসক দলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই বাম শিবিরের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করে জোট-প্রার্থীর জন্য পরিশ্রম করে কী লাভ! দলীয় সূত্রের খবর, রাজ্য কমিটিতে এই প্রসঙ্গে কেউ সরব হওয়ার আগেই প্রারম্ভিক ভাষণে রাজ্য সম্পাদক নিজেই বাইরনের প্রসঙ্গ তোলেন। বৈঠকে সেলিম বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দল বিজেপি এবং তৃণমূল সাংসদ-বিধায়ক ভাঙাতে সিদ্ধহস্ত। কোনও জনপ্রতিনিধি যদি বাজারে বিক্রি হয়ে যান, তা অবশ্যই ‘অনভিপ্রেত’। কিন্তু ভোটে জিতে বিধায়ক দলবদল করেছেন বলেই এই রাজ্যে বাম ও কংগ্রেসের সমঝোতা করে চলার সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক যুক্তি এবং প্রয়োজন ফুরিয়ে যাচ্ছে না। বরং, সাগরদিঘিতে তৃণমূল ও বিজেপিকে হারিয়ে মানুষ বাম-সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীকে বেছে নিয়েছিলেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের মতে, তাঁকে ভাঙিয়ে নিয়ে তৃণমূল বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা মানুষের ওই রায়ে ভয় পেয়েছে!
পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি নিয়েই এ দিন বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। জেলায় জেলায় বামেদের কর্মসূচিতে যে ভাল সাড়া মিলছে, বসে যাওয়া অনেক কর্মী-সমর্থকও কর্মসূচিতে ফিরছেন, সে সব কথা এসেছে। উল্লেখ করা হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের ডাকে মঙ্গলবারই বারাসতের সমাবেশে বিপুল ভিড়ের প্রসঙ্গও। তবে দলীয় সূত্রের খবর, একাধিক জেলার প্রতিনিধিরা বৈঠকে জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গের কিছু জেলায় এবং মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের সংগঠন এখনও প্রাসঙ্গিক। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের অনেক জায়গায় ‘২০টা লোক নিয়ে মিছিল করে ৪০টা আসন’ দাবি করছে কংগ্রেস! বাস্তব পরিস্থিতির বাইরে গিয়ে শর্ত দিলে আসন সমঝোতা মুশকিল হবে, এই মতই দিয়েছেন জেলার ওই নেতারা। প্রসঙ্গত, বিধান ভবনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ডাকা বৈঠকে সম্প্রতি দলের জেলা সভাপতি ও কার্যকরী সভাপতিদের অধিকাংশই দাবি করেছিলেন, যথাসম্ভব আসনে কংগ্রেস নিজেরা প্রার্থী দিক। যেখানে প্রার্থী পাওয়া সমস্যা, সেখানে বামেদের সঙ্গে আলোচনা হোক! প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব বিষয়টি স্থানীয় স্তরেই ফয়সালা করার জন্য ছেড়ে রেখেছেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে একজোট করার পথ থেকে আমরা সরছি না। কিন্তু যুক্তিপূর্ণ দাবি নিয়েই আলোচনা করতে হবে।’’