সিপিএমের এনআরসি-বিরোধী সভায় বক্তা তখন সূর্যকান্ত মিশ্র। সোমবার শহিদ মিনারে। ডান দিকে, আগুন ধরানো হল কফিনে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী ও নিজস্ব চিত্র।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) প্রতিবাদে চলতি আন্দোলনের রেশ সঙ্গে নিয়েই পুরভোটের দামামা বাজিয়ে দিল সিপিএম। এনআরসি এবং জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জি (এনপিআর) রুখতে অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশিই পুরভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়ার ডাক দিলেন সিপিএম নেতৃত্ব।
পুরসভার ওয়ার্ড-ভিত্তিক সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশ হয়েছে দিনতিনেক আগে। তার আগেই পুরভোটে বিজেপি ও তৃণমূলের মোকাবিলায় জোট গড়ে লড়ার জন্য রাজনৈতিক বার্তা দলের রাজ্য কমিটিকে দিয়ে রেখেছে সিপিএম। জোট সংক্রান্ত প্রাথমিক আলোচনা আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সেরে ফেলার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এই প্রেক্ষিতেই সোমবার শহিদ মিনার ময়দানে কলকাতা জেলা সিপিএমের সমাবেশে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘সিএএ-এনআরসি’র বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলন চলছে। সাধারণ ধর্মঘটে মানুষ ভাল সাড়া দিয়েছেন, কর্মীরা রাস্তায় থেকেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কলকাতায় এমন বিক্ষোভ হয়েছে, সারা দুনিয়া জেনে গিয়েছে! এই সব প্রতিবাদ, আন্দোলনের পরে মূল কথা হচ্ছে, বুথ বুথে লড়াই নিয়ে যাওয়া। পুরভোট যে দিনই হোক, এখন থেকে তার জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।’’
এনআরসি এবং সিএএ-র প্রতিবাদে জেলায় জেলায় সমাবেশ করেছে সিপিএম। কলকাতার নানা অঞ্চলে সভা-মিছিলের পরে এ দিন ছিল জেলার কেন্দ্রীয় সমাবেশ। বেশ কিছু দিন পরে শহিদ মিনার ময়দানে সভা করল কলকাতার সিপিএম এবং সন্ধ্যা গড়িয়ে যাওয়ার পরেও সেই সভায় ভিড় ছিল ভাল। সিএএ এবং এনআরসি-র বিরোধিতায় এ দিন প্রতীকী কফিন এনে মাঠেই তাতে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন শহরের সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের একাংশ।
আরও পড়ুন: এনপিআর ফর্ম নিয়ে ভুল বোঝাচ্ছে কেন্দ্রঃ মমতা
সদ্যসমাপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক থেকে এনবিআর রুখতে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সিপিএম। ‘জবাব নেহি দেঙ্গে’, এই স্লোগান সামনে রেখে মানুষের কাছে তাদের আবেদন, এনপিআর-এর প্রশ্নমালার জবাব তাঁরা যেন না দেন। সেই সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সূর্যবাবু এ দিন বলেছেন, ‘‘আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, কোনটা জনগণনার জন্য আর কোনটা এনপিআর-এর জন্য জানতে চাইছে, কী করে বুঝব? আমরা লক্ষ লক্ষ প্রচারপুস্তিকা ছেপে আপনাদের বলে দেব, কোনটার জবাব দেবেন আর কোনটার দেবেন না।’’ সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের হুঁশিয়ারি, ‘‘রাজ্যে কোনও ডিটেনশন সেন্টার গড়ার চেষ্টা হলে ভেঙে দেওয়া হবে! আর জোর করে এনপিআর করতে এলে ডিটেনশন সেন্টার থেকে খুলে নেওয়া ইট দিয়ে মাথার হিসেব নেওয়া হবে!’’
বামফ্রন্ট আমলে সব পুরসভার নির্বাচন পাঁচ বছর অন্তর হতো, কলকাতায় বাম আমলে কারা মেয়র ছিলেন আর ইদানীং কালে মেয়রেরা কী ভাবে কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছেন— সে সব বিষয়ই প্রচারে তুলে আনবে সিপিএম। দলের কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার সমাবেশে বলেছেন, গত বারের মতো ভোট-লুঠের চেষ্টা হলে দল নির্বিশেষে সব মানুষকে নিয়ে প্রতিরোধ হবে। বক্তা ছিলেন অনাদি সাহু, দেবাঞ্জন চক্রবর্তীরাও।