গড় ধরে রাখতে মরিয়া সিপিএম

টানা ৩৯ বছর ধরে গড় অক্ষত। পাঁচ বছর আগে পরিবর্তনের হাওয়া আশপাশের এলাকাতে বইলেও এখানে তা ধাক্কা খেয়েছিল। আসানসোল শিল্পাঞ্চলের সেই গড় জামুড়িয়া এ বারও ধরে রাখতে মরিয়া বামেরা।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ০১:২৭
Share:

টানা ৩৯ বছর ধরে গড় অক্ষত। পাঁচ বছর আগে পরিবর্তনের হাওয়া আশপাশের এলাকাতে বইলেও এখানে তা ধাক্কা খেয়েছিল। আসানসোল শিল্পাঞ্চলের সেই গড় জামুড়িয়া এ বারও ধরে রাখতে মরিয়া বামেরা।

Advertisement

১৯৬২ সাল থেকেই এই কেন্দ্রে আধিপত্য বামেদের। মাঝে ১৯৭২ সালে এক বার হাতছাড়া হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৭ সালে তা পুনরুদ্ধার করে বামেরা। সেই থেকে টানা তা তারা দখলে রেখেছে। গত বিধানসভা ভোটে প্রায় চোদ্দো হাজার ভোটে তৃণমূল প্রার্থী প্রভাত চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে দেন সিপিএমের জাহানারা খান। এ বার জাহানারা ফের প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন এবং বিজেপি নেতা সন্তোষ সিংহ।

আগের বিধানসভা ভোটে বামেরা আসন ধরে রাখলেও তার পরের নানা ভোটের ফল কিন্তু হাসি ফোটাচ্ছে তৃণমূলের মুখেই। ২০০৮ সালে জামুড়িয়া ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের সবেতেই নিরঙ্কুশ প্রাধান্য নিয়ে জয়ী হয়েছিল বামেরা। সব ক’টি পঞ্চায়েত মিলিয়ে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন মোটে এক জন। সেখানে ২০১৩ সালে ১০টি পঞ্চায়েতের ৯টিতে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। শুধু তপসিতে জিতেছিল বামেরা। কিন্তু পরে সেখানকার পঞ্চায়েত প্রধান নিজেই তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তপসিও বামেদের হাতছাড়া হয়েছে। রানিগঞ্জের চাপুই পঞ্চায়েত জামুড়িয়া বিধানসভার অন্তর্গত। সেখানেও এখন ক্ষমতায় তৃণমূল।

Advertisement

২০১৪ লোকসভা ভোটে অবশ্য এই কেন্দ্রে সামান্য ভোটে এগিয়ে ছিলেন সিপিএম প্রার্থী। তবে সে বার বিজেপি এখানে প্রায় ৩৮ হাজার ভোট পাওয়ায় বাম এবং তৃণমূল, দু’পক্ষেরই ভোট কমে। বিধানসভা ভোটের তুলনায় বেশি ভোট কমে বামেদেরই। গত অক্টোবরে আসানসোল পুরনিগমের ভোটে আবার জামুড়িয়া পুর এলাকায় তৃণমূল বামেদের প্রায় দ্বিগুণ ভোট পায়। ১৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টিতেই জেতেন তৃণমূল প্রার্থীরা।

পঞ্চায়েত ও পুরভোটের এই ফল স্বস্তিতে রাখছে তৃণমূলকে। দলের নেতাদের আরও দাবি, ২০১১ সালের পর থেকে সিপিএমের সংগঠনে ভাঙন ধরেছে। তৃণমূল নেতা মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘বিস্তীর্ণ বিদ্যুৎহীন এলাকায় আমাদের সরকার বিদ্যুদয়ন করেছে। সিপিএম ছেড়ে দলে-দলে আদিবাসী ও দিনমজুরেরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। নানা সরকারি প্রকল্পের সুবিধা মানুষ এত পেয়েছেন যে উন্নয়নের কাজই এই ভোটে আমাদের এগিয়ে রেখেছে।’’ দলের প্রার্থী ভি শিবদাসনও বলেন, ‘‘জয় আমাদের নিশ্চিত।’’

সিপিএম অবশ্য ভরসা রাখছে শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে তাদের প্রভাবের উপরে। জামুড়িয়ায় গোটা ২৫ কারখানার মাত্র একটিতেই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের অনুমোদন রয়েছে। অন্য সব কারখানা থেকে নানা খনিতে শ্রমিক-কর্মীদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনই ভোটে তাদের পক্ষে যাবে বলে মনে করেন সিপিএম নেতারা। পঞ্চায়েত ভোট ও পুরভোটে শাসক দল সন্ত্রাস করে জিতেছে বলে অভিযোগ করেন। দলের অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক মনোজ দত্ত। তাঁর দাবি, নতুন শিল্প গড়ে না ওঠায় সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদলের আগে এই এলাকায় গোটা তিনেক বড় কারখানা তৈরির কথাবার্তা হয়েছিল। কিন্তু পরে আর তা এগোয়নি। মনোজবাবুর অভিযোগ, ‘‘সন্ত্রাস ও তোলাবাজির জেরে অনেক শিল্পই অন্যত্র চলে গিয়েছে। ঝাঁপ পড়েছে কয়েকটি কারখানায়। দু’টি খনি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চুরুলিয়া-সহ কয়েকটি এলাকার মানুষ কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ সবের জন্যই মানুষ আমাদের ভোট দেবেন।’’ সিপিএম প্রার্থী জাহানারারও বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল এবং বিজেপি, দু’টি দলেরই মিথ্যাচার ও অপশাসনে মানুষ দিশেহারা। তাই বাম-কংগ্রেস জোটের জয় হবে।’’

সিপিএম নেতাদের আরও যুক্তি, গত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ছিল। তা সত্ত্বেও তাঁদের জয় হয়েছিল। এ বার কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের আসন সমঝোতা হচ্ছে। ফলে, কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক এ বার তাঁদের দিকে আসবে। তাই ব্যবধান আরও বাড়বে। সিপিএম নেতা মনোজবাবুর কথায়, ‘‘গত বারের দ্বিগুণ ব্যবধানে জিতব বলে আশা করছি।’’

পরিস্থিতি বুঝে আশাবাদী হচ্ছে বিজেপিও। লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে প্রায় ৩৮ হাজার ভোট পেলেও পুরভোটে তারা পেয়েছে হাজার আটেক ভোট। তবু এ বার তৃণমূল-বিরোধী ভোট তাঁদের ঝুলিতেই জমা হবে বলে বিজেপি নেতাদের দাবি। দলের প্রার্থী সন্তোষ সিংহ বলেন, ‘‘দুই দলের প্রতি অবিশ্বাসই আমাদের সব থেকে বড় অস্ত্র হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement