রামই মুখ বামেদের

কলকাতা থেকে আসা এক তারকা প্রার্থীর কাছে হারতে হয়েছিল লোকসভা ভোটে। আসন্ন বিধানসভা ভোটের লড়াইয়ে এ বার সেই রামচন্দ্র ডোমের উপরেই ভরসা করল সিপিএম। সোমবার কলকাতায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সিপিএমের দফতর থেকে প্রকাশিত বামফ্রন্টের প্রথম পর্যায়ের তালিকায় বীরভূমের জেলা সদরে দলীয় প্রার্থী হিসাবে রয়েছে তাঁরই নাম।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৬ ০২:১৯
Share:

নাম ঘোষণার আগেই সিউড়িতে শুরু হয়ে গেল দেওয়াল লিখন। (ইনসেটে) এক ছবি দুবরাজপুরেও। নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা থেকে আসা এক তারকা প্রার্থীর কাছে হারতে হয়েছিল লোকসভা ভোটে। আসন্ন বিধানসভা ভোটের লড়াইয়ে এ বার সেই রামচন্দ্র ডোমের উপরেই ভরসা করল সিপিএম।

Advertisement

সোমবার কলকাতায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সিপিএমের দফতর থেকে প্রকাশিত বামফ্রন্টের প্রথম পর্যায়ের তালিকায় বীরভূমের জেলা সদরে দলীয় প্রার্থী হিসাবে রয়েছে তাঁরই নাম। সিউড়িতে তৃণমূলের চিকিৎসক প্রার্থী বিরুদ্ধে জেলার রাজনীতিতে এই পরিচিত চিকিৎসক-মুখের মনোনয়নে রীতিমতো উজ্জীবিত দলের কর্মী-সমর্থকেরা। বাকি কেন্দ্রগুলিতে নাম ঘোষণার আগেই সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্রবাবুর নেতৃত্বেই ভোট-ময়দানে ঝাঁপানোর চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করেছেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। সঙ্গে থাকছে অনুচ্চারিত ‘জোট-সঙ্গী’ কংগ্রেসও। দুই সঙ্গীরই লক্ষ্য— জেলার প্রতিটি আসনেই একের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ে নেমে শাসকদল তৃণমূলকে জোর টক্কর দেওয়া। সে ক্ষেত্রে প্রার্থিতালিকা ঘোষণায় পিছিয়ে থেকেও বামেরা রামচন্দ্রকে সিউড়ির প্রার্থী করে ওই লড়াইয়ের ‘মুখ’ ঠিক করে দিল বলেই মনে করছেন জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

ঘটনা হল, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে একই রকম উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছিল যখন আগাগোড়া স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্রবাবুকে সিপিএমের জেলা সম্পাদকের পদে বসানো হয়েছিল। যদিও বৃহত্তর দায়িত্বের জন্য মাস ছয়েকের মধ্যে সম্পাদক পদ ছেড়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন রামচন্দ্র। এ বার তাঁর কাঁধে আরও বড় দায়িত্ব। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও মত, ১৯৮৯ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বীরভূম এবং ২০০৯ সালে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রে টানা জিতে আসা প্রাক্তন সাংসদের মতো পোড়খাওয়া রাজনীতিককে বিধানসভায় প্রার্থী করে ইতিবাচক বার্তাই দিল বামেরা।

Advertisement

বামেদের উচ্ছ্বাস এই পর্যায়ে যে আলিমুদ্দিন থেকে অনুষ্ঠানিক নাম ঘোষণার আগেই সিউড়ি শহরে বিভিন্ন জায়গায় জোট-প্রার্থী হিসাবে রামচন্দ্রের নামে দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছিল। বাম নেতা-কর্মীরা জানাচ্ছেন, জেলার রাজনীতিতে রামচন্দ্র বিতর্কহীন এক নাম। সকলের কাছেই গ্রহণযোগ্য। লোকসভার মতো বড় ক্ষেত্রে ভোট ময়দানে নামার এবং জেতার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাঁর মতো নেতার বিধানসভার লড়াই তেমন কঠিন হবে না বলেই দাবি দলীয় কর্মী-সমর্থকদের। তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ার এই সময়ে তাঁর মতো নেতার নেতৃত্বই প্রযোজন ছিল বলে তাঁরা মনে করছেন। এ ব্যাপারে কংগ্রেস নেতৃত্বেরও সমর্থন পাওয়া যাবে বলেও তাঁদের মত। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মিও বলছেন, ‘‘সিউড়িতে রামচন্দ্রকে প্রার্থী হওয়ায় আমরা খুশি। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি এবং অভিজ্ঞতার জন্য উনি সামনে থেকে লড়াই শুরু করতে পারবেন।’’

এ দিকে দিন তিনেক আগে সিউড়ি কেন্দ্রে তৃণমূল যখন অশোক চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করে তখনই দলের একটা অংশ মনে করেছিল, এই আসনে বিরোধী প্রার্থী কে হচ্ছেন, তার উপরে জেলায় তৃণমূলের জেতা-হারা অনেকটাই নির্ভর করবে। এখন শাসকদলের একাংশও মানছে, লড়াই সত্যিই কঠিন হল। ঘটনাচক্রে, লড়াইয়ের ময়দানে মুখোমুখি হলেও দুই চিকিৎসকই একে অন্যের সহপাঠী, বন্ধুও। নাম ঘোষণার পরে দু’জনেই বলছেন, ‘‘বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর লড়াই নয়, এই লড়াই নীতির, আদর্শের লড়াই। স্বাস্থ্যকর হোক আমাদের এই লড়াই।’’

তবে শুধু অভিজ্ঞ রামচন্দ্রই নন, দুবরাজপুর বিধানসভা কেন্দ্রে টানা জিতে আসা ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক বিজয় বাগদি এবং নলহাটি কেন্দ্রের দু’বারের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক দীপক চট্টোপাধ্যায়ের উপরে ফের ভরসা করেছে বামেরা। পাশাপাশি এখনও পর্যন্ত ঘোষিত তালিকায় লড়াইয়ের ময়দানে দুই নতুন মুখ ময়ূরেশ্বরে অরূপ বাগ এবং লাভপুরে মফিজুল করিম। লাভপুরের পুসুলিয়ার ছেলে মফিজুল ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে ১৯৮১ সালে বাম রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৮৭ সালে ডিওয়াইএফ-এ যোগ। ১৯৯৬ সালে পান সিপিএমের সদস্যপদ। ছিলেন লাঙ্গলহাটা লোকাল কমিটির সম্পাদকও। বর্তমানে লাভপুর জোনালের এই সদস্য আগে কখনও নির্বাচনে লড়েননি।

অন্য দিকে, জেলার রাজনীতিতে অরূপ বাগও পরিচিত নাম। ময়ূরেশ্বরের ভেলিয়ানের বাসিন্দা এই বাম নেতা ১৯৮০ সালে পার্টির সদস্য হন। ১৯৮৯ লোকাল কমিটির সদস্য হন। ২০০৫ সালে হন ময়ূরেশ্বর জোনাল সম্পাদক। ভোট-রাজনীতিতে নামার অভিজ্ঞতা তাঁর আগেও হয়েছে। স্থানীয় কানাচি পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন। দু’বার হয়েছেন ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েতের সমিতির সভাপতিও। বর্তমানে জেলা কমিটির সর্বক্ষণের সদস্য হয়েছেন অরূপবাবু। জেলার রাজনীতিতে আর এক পোড়খাওয়া নাম বিজয় বাগদি। খয়রাশোলের চূড়োর বাসিন্দা সেই ১৯৭৮ সাল থেকে রয়েছেন রাজনীতিতে। ১৯৮৩ সালে পান দলের সদস্যপদ। মোট ছ’বার জেতা বিজয়বাবু এ বার সপ্তমবার নির্বাচনে লড়ছেন। একবারও হারেননি। ১৯৮৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন। ডিলিমিটেশনের পরে দুবরাজপুর বিধানসভা হয়ে যাওয়ায় গত বার প্রবল তৃণমূল ঝড়েও এই কেন্দ্র থেকে লড়েই জিতেছিলেন।

এ দিন রাতে তালিকা ঘোষণার পরে ‘মিশন ২০১৬’-র বামেদের প্রধান কাণ্ডারী রামচন্দ্র অবশ্য বলছেন, ‘‘তৃণমূলকে হারাতে মানুষ জোট বেঁধেছেন। নির্বাচনে কোনও ক্ষেত্র ছোট বা বড় নয়, সব লড়াই-ই সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ব।’’ আর এ বারের লড়াইয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে নিয়ে তাঁর সংশ্রিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ব্যবহারিক রূপই হল জোট।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement