সিপিএমের এক পলিটবুরো সদস্যের মতে, ‘‘সাম্প্রতিক কোনও নির্বাচনে আর জোট-প্রক্রিয়া ছিল না। এ বারও ওঁরা প্রথমে বললেন দুই আসনেই লড়বেন। তবে এই উপনির্বাচনে কিছু করা না গেলেও পরবর্তী নির্বাচনের কথা ভেবে এই প্রক্রিয়াটা শুরু করতে পারলে ভাল।’’
প্রতীকী ছবি।
বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আলোচনার পাট। রাজ্যের দুই কেন্দ্রে জোড়া উপনির্বাচন উপলক্ষে ফের যোগাযোগের দরজা খুলল সিপিএম ও কংগ্রেসের মধ্যে। তবে পরিস্থিতি যেখানে দাঁড়িয়ে, তাতে আসন্ন উপনির্বাচনে জোটের সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাৎক্ষণিক ফল না পেলেও ভবিষ্যতের নির্বাচনের কথা ভেবে আলোচনার দরজা খুলে রাখার কথাই বলছেন দু’দলের নেতৃত্ব।
আসানসোল লোকসভা ও বালিগঞ্জ বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে ইতিমধ্যেই প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। প্রার্থী দিয়েছে বিজেপিও। কংগ্রেসের প্রার্থী ঘোষণা এখনও হয়নি। তবে জেলা থেকে প্রদেশ কংগ্রেস মারফত নাম পাঠানো হয়েছে এআইসিসি-র কাছে। প্রদেশ কংগ্রেসেরই একাংশ আবার এআইসিসি-র কাছে অনুরোধ জানিয়ে রেখেছেন, রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি মাথায় রেখে দুই কেন্দ্রেই বামেদের সমর্থন করা হোক। এনআরসি-সিএএ’র পক্ষে প্রবল সমর্থন করে আসা বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি ছেড়ে এসে বালিগঞ্জে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হওয়ায় ওই আসনে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ভোটের বিভাজন আটকে তাঁকে কড়া লড়াইয়ে ফেলতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব। বালিগঞ্জে বামেদের সমর্থন দিয়ে পরিবর্তে আসানসোল কেন্দ্রটি কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া হলে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের বিশেষ আপত্তি ছিল না বলে সূত্রের খবর। কিন্তু আসানসোলে সিপিএম পার্থ মুখোপাধ্যায়কে প্রার্থী করায় এবং তিনি প্রচারে নেমে যাওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে।
সিপিএমের সদ্যসমাপ্ত রাজ্য সম্মেলনে ফের সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তি ও ব্যক্তিকে একজোট করার চেষ্টা চালাবে দল। নতুন দায়িত্ব পেয়েই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম দলের কলকাতা ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা নেতৃত্বকে কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলার বার্তাও দিয়েছেন। কিন্তু সেই প্রচেষ্টায় বিশেষ ফল মেলেনি। বিধানসভা ভোটের পরে রাজ্যে বেশ কয়েকটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন হয়েছে, তার পরে হয়েছে পাঁচটি পুর-নিগম এবং ১০৮টি পুরসভার ভোট। সেই ভোটে হাতে-গোনা দু-একটি ক্ষেত্র ছাড়া কোথাও বাম ও কংগ্রেসের জোট ছিল না। ফলে, দু’দলের নেতৃত্বকেই আবার জেলা বা স্থানীয় স্তরকে জোটের প্রক্রিয়ায় মানিয়ে নেওয়াতে বেগ পেতে হচ্ছে!
উপনির্বাচন উপলক্ষে কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে দু’দফায় বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর কথা হয়েছে। সূত্রের খবর, তার পরে ঝালদা-কাণ্ডে মামলা সংক্রান্ত বিযয়ে সিপিএমের সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর আলোচনাতেও উপনির্বাচন প্রসঙ্গ এসেছিল। সিপিএম সাংসদকে প্রদেশ সভাপতি ইঙ্গিত দেন, ১:১ সূত্রে আসন-রফা হলে কংগ্রেসও উৎসাহী। তত দিনে অবশ্য বামেদের প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। যদিও প্রদেশ সভাপতি প্রথমেই ঘোষণা করেছিলেন, তাঁরা দুই আসনেই প্রার্থী দেবেন। কংগ্রেসের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘বামেরা তো প্রার্থী দিয়েই দিয়েছে। এখন কি আর জোট সম্ভব? এআইসিসি-ই চূড়ান্ত ঘোষণা করবে।’’
সিপিএমের এক পলিটবুরো সদস্যের মতে, ‘‘সাম্প্রতিক কোনও নির্বাচনে আর জোট-প্রক্রিয়া ছিল না। এ বারও ওঁরা প্রথমে বললেন দুই আসনেই লড়বেন। তবে এই উপনির্বাচনে কিছু করা না গেলেও পরবর্তী নির্বাচনের কথা ভেবে এই প্রক্রিয়াটা শুরু করতে পারলে ভাল।’’