—প্রতীকী ছবি।
আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনাও শুরু হয়নি। তবে আগামী লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক পরিকল্পনায় তিন জেলার ৬টি আসনে বিশেষ নজর দিতে চাইছে সিপিএম। একই ভাবনা কংগ্রেস শিবিরেও। সিপিএমের মতে, মধ্য ও উত্তরবঙ্গের সংযোগকারী এলাকা জুড়ে ওই ৬টি লোকসভা আসনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করে ভাল ফল করা সম্ভব।
বাংলায় ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নামে কোনও নির্বাচনী আঁতাঁত হবে না বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। দলের সমাজমাধ্যম পেজ ও চ্যানেলে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, লোকসভা ভোটের বিষয়ে পুজোর পরে তাঁরা কংগ্রেস এবং আইএসএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন। কংগ্রেস এতটা স্পষ্ট করে কিছু না বললেও কেরল ও বাংলায় যে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সমীকরণ মেনে এগোনো কঠিন, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। এমতাবস্থায় মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুর জেলায় ৬টি লোকসভা আসনের উপরে বিশেষ ভাবে নজর দেওয়ার পক্ষপাতী সিপিএম। দলের নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে মসৃণ ভাবে আসন ভাগ হলে এবং প্রয়োজনে আইএসএফের সমর্থনও পাওয়া গেলে ওই কেন্দ্রগুলির বেশির ভাগেই জেতার জায়গায় পৌঁছতে পারে জোট শিবির। আর জয়-পরাজয় সরিয়ে রেখে দেখতে গেলে ওই ৬টি আসনেই নির্ণায়ক ভূমিকায় থাকতে পারে বাম-কংগ্রেস।
ওই ৬টি আসনের মধ্যে এখন দু’টি করে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির দখলে। বাকি দু’টি রয়েছে কংগ্রেসের হাতে। সিপিএমের অন্দরের খবর, মুর্শিদাবাদ জেলায় বহরমপুর ও জঙ্গিপুর কংগ্রেসকে ছেড়ে মুর্শিদাবাদ আসনটি নিজেরা লড়ার কথা বলে কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার প্রস্তাব রয়েছে। মালদহ দক্ষিণ কংগ্রেসের জেতা আসন, উত্তরের আসনটি সিপিএম চাইতে পারে। আর উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জও প্রয়োজনে কংগ্রেসকে ছাড়া যেতে পারে। যদিও রায়গঞ্জের জন্য বাম শিবিরের একাংশেও দাবি আছে। রাজ্যে সার্বিক ভাবে আসন সমঝোতা না হলেও ২০১৯ সালে বহরমপুর ও মালদহ দক্ষিণ আসনে প্রার্থী দেয়নি সিপিএম। ওই দুই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী এবং আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘আমাদের ভোট সারা রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, নির্দিষ্ট কোনও জায়গায় কেন্দ্রীভূত নয়। কংগ্রেসের ভোট কেন্দ্রীভূত থাকায় কম আসনে লড়েও তাদের জয়ের সম্ভাবনা বরাবরই বেশি থাকে। মালদহ, মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় দু’পক্ষের হাতেই লড়ার মতো আসন থাকলে সমঝোতা অনেক ভাল ভাবে হতে পারে। সেটা হলে ওই এলাকার আসনগুলিতে জয়ের সম্ভাবনাও বাড়বে।’’ তিন জেলার সংখ্যালঘু ভোটকেও এই ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
বাংলায় তাঁরা যে তৃণমূলের অপশাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থেকে সরে আসতে নারাজ, বারেবারেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর। অন্য দিকে, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সলতে পাকানো শুরু হতেই উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত এআইসিসি-কে চিঠি দিয়েছেন তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তায় যাওয়ার বিরোধিতা করে। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘কী সূত্রে আসন ভাগ হবে, এখনই বলা কঠিন। তবে আলোচনা করে ঠিক ভাবে জোট করতে পারলে মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরে অবশ্যই ভাল লড়াই করা সম্ভব।’’ দক্ষিণবঙ্গের জন্য অবশ্য আসন ভাগাভাগির আলাদা ভাবনা থাকবে। হাওড়ায় আগামী ৩ থেকে ৫ নভেম্বর রাজ্য কমিটির বর্ধিত বিশেষ অধিবেশনে সাংগঠনিক স্তর থেকে বিশদে রিপোর্ট নেবে সিপিএম।