INDIA Alliance

রাজ্যে ফের হাত ধরতে চায় সিপিএম-কংগ্রেস, কিন্তু মাঝে ‘কবাব মে হাড্ডি’র মতো ঢুকে রয়েছে তৃণমূল

শাসক দলের কাঁটা না সরলে বিড়ম্বনা কেমন ভাবে গ্রাস করেছে সিপিএম এবং কংগ্রেসকে, দুই শিবিরের অভ্যন্তরীণ ঘটনাপ্রবাহে তার ইঙ্গিত আছে। দুই বিরোধী দলকে যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে নিভৃতে, সন্তর্পণে!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:২৩
Share:

—প্রতীকী ছবি।

এক জনের নাম বক্তা-তালিকায় লিখে রেখেছে অন্য দল। তবে খসড়া তালিকা, ঘোষণা হয়নি। আর যাঁর নাম লিখেও ঘোষণা করা যায়নি, তিনি নিজের দলের কেন্দ্রীয় স্তরে জানিয়ে দিয়েছেন, যদি তাঁদের অমতেই অন্য কারও হাত ধরতে হয়, তা হলে দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হোক! তেমন পরিস্থিতি হলে তিনি না হয় নির্দল প্রার্থী হয়ে লোকসভা ভোট নিজের দমে লড়ে নেবেন!

Advertisement

বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র জেরে এখন বাংলায় এমনই হাল সিপিএম ও কংগ্রেসের। দু’দলের সম্পর্কের মাঝে ‘কাবাব মে হাড্ডি’র মতো ঢুকে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস! রাজ্যে দুই বিরোধী দলই পরস্পরের হাত ফের ধরতে ইচ্ছুক কিন্তু শাসক দলের ছোঁওয়া বাঁচিয়ে যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে নিভৃতে, সন্তর্পণে!

শাসক দলের কাঁটা না সরলে বিড়ম্বনা কেমন ভাবে গ্রাস করেছে সিপিএম এবং কংগ্রেসকে, দুই শিবিরের অভ্যন্তরীণ ঘটনাপ্রবাহে তার ইঙ্গিত আছে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর প্রয়াণ দিবসে আগামী ১৭ জানুয়ারি নিউ টাউনে তাঁর নামাঙ্কিত ‘সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ় অ্যান্ড রিসার্চ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হবে। সেই উপলক্ষে ‘ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র রক্ষার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা-সভায় আসার কথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির। বক্তা দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও। সূত্রের খবর, নীতীশ, ইয়েচুরি, সেলিমদের পাশাপাশি লোকসভায় বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতা ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নামও প্রাথমিক বক্তা-তালিকায় রেখেছিল সিপিএম। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আসন-রফা নিয়ে ঘরোয়া কথা চলতে থাকায় অধীরের নাম সংবলিত তালিকা ঘোষণা করা যায়নি!

Advertisement

সিপিএম সূত্রে ইঙ্গিত, অনুষ্ঠানের আগে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের কথা চুকে গেলে অধীরকে নিয়ে আসার চেষ্টা হতে পারে। তবে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’য় যোগ দিতে যাওয়া প্রদেশ সভাপতি তখন আর সময় করতে পারবেন কি না, ঠিক নেই। রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের কেউ কেউ অবশ্য ১৭ তারিখের অনুষ্ঠানে শ্রোতা হিসেবে আমন্ত্রিত। সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘কংগ্রেসকে এই অনুষ্ঠানে পেলে তো ভালই। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে রফার প্রশ্নে কংগ্রেস নিষ্পত্তি না করলে আমাদের হাত-পা বাঁধা।’’

হাত-পা বাঁধার দশা স্বয়ং অধীরেরও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দাক্ষিণ্যে’ তিনি ভোটে লড়তে চান না, একাধিক বার স্পষ্ট করে বলেছেন। কিন্তু দিল্লির এআইসিসি নেতারা কি সে কথা বুঝছেন? কংগ্রেস সূত্রের খবর, জোটের প্রশ্নে তাঁর ‘চরম অবস্থানে’র কথা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে রেখেছেন প্রদেশ সভাপতি। বলেছেন, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের স্বার্থে যদি তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতেই হয়, তা হলে তাঁকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে অন্য কাউকে এনে আলোচনা করা হোক। একে তো কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হলে বহরমপুর আসন অধীরের জন্য আরও নড়বড়ে হবে, ফায়দা পাবে বিজেপি। তা ছাড়া, পঞ্চায়েত ভোটের কয়েক মাসের মধ্যে বিজেপি-বিরোধিতার নাম করে তৃণমূলের সঙ্গে গেলে নিজেদের রাজনীতিকেই অস্বীকার করা হবে। শুধু প্রদেশ সভাপতির পদ ছ়়েড়েই নয়, প্রয়োজনে নির্দল প্রার্থী হয়ে তিনি বহরমপুরে লড়তে নেমে যেতে পারেন, এমন কথাও এআইসিসি নেতৃত্বকে সাংসদ শুনিয়ে রেখেছেন বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। অধীরের ঘনিষ্ঠ মহলের এক নেতার কথায়, ‘‘দাদা অনেক দিন সাংসদ আছেন। পেনশন নিশ্চিত! এখন রাজনীতিতে নাক কেটে কাজ কী!’’

এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলার ভূখণ্ডে আসতে চলেছে রাহুলের ‘ন্যায় যাত্রা’। যেখানে ‘ইন্ডিয়া’ শরিকদের অংশগ্রহণ করার কথা। তৃণনমূল অবশ্য মনোভাব স্পষ্ট করেনি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম বলে রাখছেন, ‘‘আমরা ‘ন্যায় যাত্রা’য় যেতেই পারি, কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু তৃণমূল থাকলে সেটা হবে না। আমরা বলেই দিয়েছি, তৃণমূলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনও সংস্রবে আমরা নেই।’’ অবস্থা বিচারে দু’ধরনের প্রতিনিধিত্ব ভেবে রাখছে সিপিএম। তৃণমূল না থাকলে রাহুলের যাত্রায় সরাসরি সিপিএম থাকবে। আর তৃণমূল থাকলে ‘বিকল্প’ প্রতিনিধিত্ব করা হতে পারে। আর এই প্রশ্নে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল ‘ন্যায় যাত্রা’য় আসবে কি না, জানি না। কেউ আসতে চাইলে তো বলতে পারব না যে, এসো না! কী করা যাবে!’’ রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের মন্তব্য, ‘‘রাহুল গান্ধী আসতে পারেন, যে কেউই আসতে পারেন। ভোটের ফলটা বিধানসভার স্কোরলাইন থেকেই বুঝে নেওয়া যায়!’’

ভোটের আগে বিড়ম্বনাই আপাতত বিপুল!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement