রবীন দেব পঞ্চম আসনে বামেদের প্রার্থী হিসেবে লড়বেন বলে শুক্রবার সিপিএমের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে। ফাইল চিত্র।
শেষ মুহূর্তে বেকায়দায় পড়ল আলিমুদ্দিন। রাজ্যসভা নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া হবে কি না, কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা হবে কি না— নানা প্রশ্ন নিয়ে দীর্ঘ টালবাহানা চালাচ্ছিল সিপিএম। সমঝোতার আশা ছেড়ে দিয়ে শুক্রবার প্রার্থী ঘোষণা করল কংগ্রেস। আর কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত জেনেই পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে রবীন দেবকে লড়াইয়ের ময়দানে নামিয়ে দিল সিপিএম।
রাজ্যসভার পঞ্চম আসনে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি যাতে ওয়াকওভার না পান, তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর বিমান বসুরা। শুক্রবার সিপিএমের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, রবীন দেব পঞ্চম আসনে বামেদের প্রার্থী হিসেবে লড়বেন।
বিমান বসু আরও দাবি করেন, রাজ্যসভা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই এবং সমঝোতার বিষয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে কথা চলছিল। কথা শেষ হওয়ার আগেই কংগ্রেস হাইকম্যান্ড দিল্লি থেকে একতরফা ভাবে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করা ছাড়া আর কোনও পথ সিপিএমের সামনে ছিল না বলে নেতৃত্বের দাবি।
আরও পড়ুন: রাজ্যসভায় অধীরের চমক, কংগ্রেস প্রার্থী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি
রাজ্যসভার পঞ্চম আসনটি যাতে তৃণমূলের হাতে না যায়, যাতে বিরোধীদের হাতেই থাকে, তার জন্য কংগ্রেসই সর্বাগ্রে উদ্যোগী হয়েছিল। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে প্রার্থী করুক সিপিএম, সমর্থন করবে কংগ্রেস। কিন্তু সিপিএম সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি। কংগ্রেসের কোনও প্রার্থীকে সমর্থনের প্রস্তাবও সিপিএম দেয়নি। এমনকী যৌথ প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তাব মেনে নেওয়ার প্রশ্নেও বিস্তর টালবাহানা চালিয়ে গিয়েছে তারা।
আরও পড়ুন: সরলেন বুদ্ধ-শ্যামলেরা, বয়স কমাল সিপিএম
শুক্রবার কংগ্রেস নিজেদের প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করে ফেলে। তাতেই বেজায় চটে যান এ রাজ্যের বাম নেতারা। কংগ্রেস প্রার্থী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে রবীন দেবকে টিকিট দেওয়ার কথা তাঁরা ঘোষণা করে দেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রবীন দেবকে প্রার্থী করে আপাতত মুখ বাঁচানোর চেষ্টা করছে বামেরা। তৃণমূল যে হেতু পঞ্চম আসনে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে, সে হেতু রবীন দেবের হার প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বিজেপির থেকে সমদূরত্ব বজায় রাখার নীতিতে যে সিপিএম অটল, রবীন দেবকে প্রার্থী করে আপাতত সেটুকুই বোঝাতে চাইছেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্ররা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এ দিন ঘোষণা করেছেন যে, পঞ্চম আসনে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে সমর্থন করবে তৃণমূল। এর মাধ্যমে কংগ্রেসকে কাছে টানার বার্তা তো তিনি দিয়েছেনই। একই সঙ্গে বার্তা দিয়েছেন বিজেপি এবং বামেদেরও। বিজেপি বাংলায় যত চাপ বাড়াবে তৃণমূলের উপর, জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূল ততই শক্ত করবে কংগ্রেসের হাত— মমতা এই বার্তা দিতে চেয়েছেন মোদী-শাহ জুটিকে। আর বিজেপি-কে রোখার স্বার্থে বামেরা যদি অন্য অ-বিজেপি শক্তিগুলির সঙ্গে হাত মেলাতে এখনও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখায়, যদি ছুঁৎমার্গ বহাল রাখে, তা হলে বাংলার রাজনীতিতে তাঁরা আরও হীনবল হয়ে পড়বেন, সে কথা বামেদের বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন মমতা।