—প্রতীকী ছবি।
জাতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে শামিল হয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস এবং সিপিএম। কিন্তু রাজ্যে সব ঠিকমতো এগোলে সাগরদিঘি মডেলেরই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করেছিল বামফ্রন্ট। জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে এ বার সিপিএম প্রার্থীকে সমর্থন দিতে তৈরি কংগ্রেস। এই উপনির্বাচনকে সামনে রেখেই দু’দল বার্তা দিতে চায়, জাতীয় স্তরে যা-ই হোক না কেন, বাংলায় বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে একসঙ্গেই লড়বে বাম ও কংগ্রেস।
বাংলায় যে ‘ইন্ডিয়া’ জোট বাস্তবের মাটিতে কোনও চেহারা নেবে না, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত ধরা পড়ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যেও। ঝাড়গ্রামে বুধবার আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, ‘‘এখন রাম, বাম জগাই মাধাই গদাই! মানে সিপিএম-কংগ্রেস। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ওখানে জাতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ আর এখানে ‘বিজেন্ডিয়া’। বিজেপির সঙ্গে বসে আছে। লজ্জাও করে না!’’ তাঁর আরও আক্রমণ, ‘‘মানুষের একটা নীতি থাকে, সেই নীতি মেনে চলতে হয়। আমাদের লড়াই সিপিএমের বিরুদ্ধে বাংলায়, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বাংলায়। আর বিজেপির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই থাকবেই।’’
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আবার পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘সীতারাম ইয়েচুরি আর রাহুল গান্ধী অনুরোধ করেছেন, ‘আমাদের দু’টো পার্টি পশ্চিমবঙ্গ থেকে উঠে যাচ্ছে! আপনি একটু আমাদের গালি দিন!’ এটাও সেটিং।’’
তৃণমূল আর বিজেপির মোকাবিলার লক্ষ্যকে সামনে রেখে তলায় তলায় প্রস্তুতি চালাচ্ছে বামেরা। তাদের সঙ্গে সহমত কংগ্রেসও। সিপিএম সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সাগরদিঘির মতোই কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ধূপগুড়িতে লড়াই করা হবে। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব আলোচনা করে এই কৌশল ঠিক করার পরে আজ, বৃহস্পতিবারই বামফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হয়েছে। বাম শরিকদের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে বামফ্রন্টের প্রস্তাব পাঠানো হবে বলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রের খবর। সাগরদিঘির উপনির্বাচনের সময়ে অধীর প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে।
অধীর অবশ্য এখনই স্পষ্ট করে দিচ্ছেন, ধূপগুড়িতে বাম প্রার্থীকে সমর্থনে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। দিল্লি থেকেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলছেন, ‘‘চিঠির আনুষ্ঠানিকতারও দরকার নেই। ধূপগুড়িতে বাম প্রার্থীকে আমরা সমর্থন করব। আমাকে বললে ওখানে বাম প্রার্থীর হয়ে প্রচারেও যাব। বাংলায় আমাদের লড়াই বিজেপি ও তৃণমূল, দু’দলেরই বিরুদ্ধে। সেই লড়াই চলবে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণের জবাব দিতে গিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও বলেছেন, ‘‘ঠেলায় পড়ে তৃণমূল নেত্রী ‘ইন্ডিয়া’ জোটে গিয়েছেন। কিন্তু ‘বিজেন্ডিয়া’ কথাটা বলে উনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই জোট সম্পর্কে আসলে তাঁর মনোভাব কী! দুর্নীতি, লটের জেরে ওঁরা একেবারে কোণঠাসা, সেই সময়ে চাইছিলেন সিপিএম এবং কংগ্রেস একটু পাশে থেকে বদনামের ভাগী হবে!’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘আমরা আবার বলছি, জাতীয় স্তরে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই। কিন্তু রাজ্যে বাম ও কংগ্রেসের লড়াই বিজেপি এবং তৃণমূল, দু’টো দলের বিরুদ্ধেই।’’
সাগরদিঘি ও ধূপগুড়ির রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবশ্য এক নয়। উত্তরবঙ্গের ওই এলাকায় বাম ও কংগ্রেস সাংগঠনিক ভাবে কাহিল, এগিয়ে তৃণমূলই। কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ৫.৭৩% ভোট পেয়েছিলেন। দু’দলেরই মূল লক্ষ্য, লোকসভা নির্বাচনের আগে নিজেদের ভোট বাড়িয়ে নেওয়া। ধূপগুড়িতে ২০২১ সালে বিজেপি জিতেছিল চার হাজারের কিছু বেশি ভোটে। তৃণমূল ওই কেন্দ্রে ২০১৬ সালে জয়ী হয়েছিল প্রায় ১৯ হাজার ভোটে। আবার ২০১১ সালে সিপিএম জিতেছিল চার হাজারের সামান্য বেশি ভোটে। তিন বার তিন দলের জয়ের এই ইতিহাসও রাজনৈতিক শিবির মাথায় রাখছে।