এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের হাতে ফোঁটা নিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। — ছবি ফেসবুক থেকে
লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, দীপাবলির পর এ বার ধর্নাস্থলে ভাইফোঁটা পালন করলেন স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর চাকরিপ্রার্থীরা। বুধবার কলকাতার মেয়ো রোডে ভাইফোঁটা পালন করেন তাঁরা। চাকরিপ্রার্থীদের হাতে ফোঁটা নেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে তিনি সরব হন। অন্য দিকে, মাতঙ্গিনী হাজরার পাদদেশের ধর্নাস্থলে যান বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি চাকরিপ্রার্থীদের মিষ্টি এবং বস্ত্র বিতরণ করেন।
স্কুলে চাকরির দাবিতে এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের ধর্না অবস্থান বুধবার ৫৯১ দিনে পড়ল। রাজ্যে একের পর এক উৎসব যখন চলছে, তখনও তাঁরা রাস্তাতেই দিন কাটাচ্ছেন। লক্ষ্মীপুজোর দিন প্রতীকী লক্ষ্মী সেজে তাঁরা প্রতিবাদ জানান। সেখানে কালীপুজো এবং দীপাবলিও পালন করা হয়। বুধবার বাদ যায়নি ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানও। গান্ধীমূর্তির পাদদেশে নিজেদের মধ্যে অনুষ্ঠানটি পালন করেন তাঁরা। বিকেলে সেখানে যান সেলিম। তাঁকেও ভাইফোঁটা দেন কয়েক জন চাকরিপ্রার্থী।
সেলিমকে ফোঁটা দেওয়ার পর এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, “চাকরি পেয়ে আমাদের এখন বাড়িতে থাকার কথা ছিল। নিজের দাদা ও ভাইকে ভাইফোঁটা দিতাম। কিন্তু এই অপদার্থ সরকারের জন্য তা সম্ভব হয়নি। তবে এত দিনের এই লড়াইয়ে আমরা অনেকের সাহায্য পেয়েছি। তাঁরা আমাদের দাদা-ভাইয়ের মতো। সেলিমদাও সে রকম এক জন। তিনি বহু বার চাকরিপ্রার্থীদের পাশে থেকেছেন। ভাইফোঁটার দিনেও তিনি আমাদের সঙ্গে সময় কাটাতে এসেছেন। আমরা তাঁকে ফোঁটা দিলাম।”
মেয়ো রোডে এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের হাতে সেলিম যখন ভাইফোঁটা নিচ্ছেন, সেই একই সময়ে মাতঙ্গিনী হাজরার পাদদেশের ধর্না-অবস্থানে যান দিলীপ। সেখানে উচ্চ প্রথামিকে নিয়োগের দাবিতে ধর্না চলছে। দিলীপ অবস্থানকারীদের মধ্যে মিষ্টি এবং জামাকাপড় বিতরণ করেন। তিনি বলেন, “সরকার ৮ বছর ধরে স্বচ্ছ নিয়োগ করতে পারেনি। ভাইফোঁটার দিন ছেলেমেয়েদের রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের পাশে একটু সময় কাটাতে এলাম।”
বুধবার চাকরিপ্রার্থীদের এই ধর্না নিয়ে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন প্রয়াত সাহিত্য়িক প্রমথনাথ বিশীর কন্যা অধ্যাপিকা চিরশ্রী বিশী চক্রবর্তী। দিল্লিতে থাকা চিরশ্রী জানিয়েছেন, তিনি এই মুহূর্তে রোগশয্যায়। লিখেছেন, ‘‘আমার যদি শারীরিক ক্ষমতা থাকত, তা হলে আমাকেও আপনারা কলকাতার ধূলিলুণ্ঠিত রাস্তায় এই সমস্ত অত্যাচারিত, অবিচারগ্রস্ত, মা সরস্বতীর প্রতিনিধি ছাত্রবর্গের সঙ্গে দেখতে পেতেন। এরা আমার কেউ রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয় নয়, এরা আমার আত্মার অঙ্গ। দুর্ভাগ্যক্রমে আমার এখন সে ক্ষমতা নেই। তাই লিখিত ভাবে জানাই, যে এই শিক্ষা ও শিক্ষকজাতির প্রতি যে অপমান চলেছে, দীর্ঘ দিন ধরে, অবিলম্বে তার অবসান চাই। কেবল মুখের কথায় নয়, কাজে করে দেখানো হোক।’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘এ যেন, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি! রাজনীতি আমি বুঝি না, বুঝতেও চাই না। আমি ওদেশের ‘ভোটার’ও নই। কাজেই আমার কোনও স্বার্থ আপনারা খুঁজতে চেষ্টা করবেন না। এটা আমার ধর্মনীতি, মনুষ্য নীতির প্রকাশ মাত্র।’’