মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্য নিয়ে সুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জবাব দেন। ফাইল চিত্র।
বামেরা নিয়োগ দুর্নীতি করলেও তার প্রমাণ রাখেনি বলে অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেড রোডের ধর্না মঞ্চ থেকে সিপিএমকে নিশানা করে তৃণমূল নেত্রী বলেছিলেন, ‘‘ওদের একটা ফাইল পাবেন না। হয় চুরি করেছে, নয় পুড়িয়ে ফেলেছে বা লুকিয়ে রেখেছে।’’ তৃণমূল নেত্রীর সেই অভিযোগের পাল্টা জবাব দিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। মমতাকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা তো বার বার বলছি, যা কাগজপত্র ফাইল আছে সব বের করা হোক। তাতে কী রয়েছে খতিয়ে দেখা হোক। আসলে আমরা এমনটা বলায় মুখ্যমন্ত্রী আর ফাইল প্রকাশের পক্ষে কথা বলার কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না।’’
বুধবারই রেড রোডের ধর্না মঞ্চ থেকে বামেদের আক্রমণ করেছিলেন মমতা। ডিএ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘এমনিতে এরা চিরকুটে চাকরি পেয়েছিল সেই চোর-ডাকাতগুলোর গিয়ে বসে আছে ডিএ-র মঞ্চে।’’ একই সঙ্গে সিপিএমের আমলে নিয়োগে অনিয়মের উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, প্রাথমিক, সেকেন্ডারি, হাইস্কুল— যেখানে যা কাগজ বার হচ্ছে, তা সিপিএমের কোঅর্ডিনেশন কমিটি করেছে বিভিন্ন জায়গায় বসে থেকে। এর পরেই মমতা তুলে আনেন ফাইল প্রসঙ্গ বলেন, ‘‘ওদের একটা ফাইল পাবেন না। ২০০১, ২০০২, ২০০৯, ২০১০ সালের ফাইল সব লোপাট করেছে। আজ তোমাদের গলার জোর! ওরা যখন (ফাইলে) সই করে, তখন জায়গা ফাঁকা রাখে। পরে ওখানে লিখে দিয়েছিল। এমন কোনও কাজ নেই, যা কোঅর্ডিনেশন (কমিটি) করতে পারে না।’’ এই প্রসঙ্গেই সুজন বলেন, ‘‘‘উনি বলছেন, সব ফাইল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দলই তো বেআইনি ভাবে ১৯৮৭ সালের কাগজ পর্যন্ত বের করে এনেছে। এর পর তো আর এ কথার কোনও যুক্তি থাকছে না। আসলে মুখ্যমন্ত্রী অসত্য কথা বলছেন। কারণ, তিনি বলেছিলেন আমাদের ফাইল দেখাব ফাইল বের করব, আমরা যদি বলতাম, ফাইল বের করবেন না, তা হলে উনি বলতেন, ‘থাক ফাইল বের করলাম না’। কিন্তু আমরা তো তা বলিনি! তাতেই উনি সমস্যায় পড়েছেন।’’
বুধবার ধর্না মঞ্চ থেকে সুজনের স্ত্রী চাকরি বিতর্ক নিয়েও পরোক্ষে কটাক্ষ করেছিলেন মমতা। তবে কারও নাম করেনি। সিপিএম ঘনিষ্ঠদের চাকরি পাওয়া প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘শিক্ষকের চাকরি কাদের বৌরা পেয়েছে? খুলব খাতাটা? পেনশন নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করি? কারও ৫৫ হাজার, কারও ৬০ হাজার টাকা পেনশন। ১ তারিখে সব বেতন, পেনশন পায়।’’ মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্য নিয়ে সুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। সুজন জবাবে নিজের স্ত্রীর বেতন প্রসঙ্গে স্পষ্ট বলেন, ‘‘প্রথমত আমার স্ত্রী ৫৫ হাজার টাকা পেনশন পান না। উনি মুখ্যমন্ত্রী, কিছু বলার আগে সবটা জেনে নিন।’’ এর পরে অবশ্য মমতার আক্রমণের কারণও ব্যাখ্যা করে সুজন বলেন, ‘‘আসলে বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, গৌতম দেবদের মতো নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে কোনও কিছু প্রমাণ করতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। তার পর আমার বিরুদ্ধেও চেষ্টা করা হয়েছিল। কখনও দুর্নীতি কখনও খুনের মামলা দিয়ে সেই চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও কিছু প্রমাণ করা যায়নি। তাই এখন আমার স্ত্রীর চাকরি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এমনকি, আমার স্ত্রীর পিতা, যিনি প্রয়াত হয়েছেন, তাঁর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। শুনেছি মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন ১৯৯০ থেকে ২০১১ পর্যন্ত সমস্ত নিয়োগ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে। আমরাও চাই শ্বেতপত্র প্রকাশ হোক এবং প্রকৃত সত্য প্রকাশ্যে আসুক।