জমির যুদ্ধে দুই কমিউনিস্ট পার্টি

টাটা গোষ্ঠীর হাতে থাকা এক খণ্ড জমি! সিঙ্গুরের মতো নয় ঠিকই। তবু সেই জমিকে ঘিরেই দুই কমিউনিস্ট পার্টি সিপিএম এবং সিপিআইয়ের বিরোধ এখন চরমে! কমিউনিস্ট পার্টি বিভাজনের অর্ধশতাব্দী পরে এ বারের বিরোধ মেটাতে আবার হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে দু’দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৭ ০৪:১৯
Share:

টাটা গোষ্ঠীর হাতে থাকা এক খণ্ড জমি! সিঙ্গুরের মতো নয় ঠিকই। তবু সেই জমিকে ঘিরেই দুই কমিউনিস্ট পার্টি সিপিএম এবং সিপিআইয়ের বিরোধ এখন চরমে! কমিউনিস্ট পার্টি বিভাজনের অর্ধশতাব্দী পরে এ বারের বিরোধ মেটাতে আবার হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে দু’দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে।

Advertisement

এই বিরোধ অবশ্য মতাদর্শ বা পার্টি লাইনকে ঘিরে নয়। কেরলে বাম মোর্চার সরকারের মধ্যে দুই শরিকের দ্বন্দ্ব বেধেছে জমি বেদখল হঠানোর অভিযানকে ঘিরে। সিপিআই টাটার হয়ে উমেদারি করছে বলে মন্তব্য করে বসেছেন সিপিএমের কিছু নেতা। আর তিরুঅনন্তপুরমে দলের দু’দিনের কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকে সিপিআই প্রস্তাব পাশ করে বলেছে, পিনারাই বিজয়ন ‘একনায়কতন্ত্র’ চালাচ্ছেন! নয়ের দশকে বাম শাসিত বাংলায় তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী বিনয় চৌধুরী নিজের সরকারকেই ‘ঠিকাদারদের সরকার’ বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু আবার পাল্টা বলেছিলেন, সেই সরকারে তা হলে তিনি আছেন কেন! কেরলে দু’দলের বিবাদ কমিউনিস্ট রাজনীতিতে জ্যোতি-বিনয়ের সেই পর্বকে মনে পড়িয়ে দিচ্ছে। কেরলের মুন্নারে সরকারি জমি দখলদারদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল অভিযান। সেই কাজ করতে গিয়ে একটি গির্জা কর্তৃপক্ষের হাতে থাকা জমি থেকে ‘ক্রস’ উপড়ে ফেলেছিলেন সরকারি কর্মীরা। তার জেরে ভূমি দফতরের আধিকারিকদের সম্পর্কে তীব্র অসন্তোষ জানান বিদ্যুৎমন্ত্রী তথা সিপিএমের বিতর্কিত নেতা এম এম মানি। তার পরেই দলের বৈঠকে প্রস্তাব পাশ করে রবিবার সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক কে রাজেন্দ্রন বলেছেন, বিজয়নের সরকার যে পথে চলছে, তার সংশোধনের জন্য তাঁরা সিপিএমকে বলবেন। রাজস্বমন্ত্রী ই চন্দ্রশেখরন সিপিআইয়ের। তিনি ঠিক পথেই চলছেন বলেও মন্তব্য করেছেন রাজেন্দ্রন।

তার আগে এলডিএফের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক সিপিআইকে খোঁচা দিয়েছিল অবশ্য সিপিএমই। দু’দিন আগে রাজ্য কমিটির বৈঠকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন অভিযোগ করেন, মু্ন্নারে টাটা গোষ্ঠীর হাতে চা-বাগানের নামে যে জমি আছে, তাতে হাত পড়ুক— এটা সিপিআই চায় না। তাই তাদের এত উষ্মা। যে অভিযোগের তীব্র বিরোধিতা করেছেন রাজেন্দ্রন। সরকার পরিচালনা নিয়ে আরও কিছু বিবাদ দু’পক্ষে মধ্যে বেধে আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ইতিমধ্যেই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি-সহ পলিটব্যুরোর কাছে আর্জি জমা পড়েছে।

Advertisement

বাম নেতৃত্বের একাংশের আশঙ্কা, সিপিএম-সিপিআই বিবাদে জের কেরলের বাইরে আরও গড়াবে। সামনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সেখানে বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারে এই দ্বন্দ্ব। সিপিআইয়ের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঠিক করেছেন, এই মাসেই মুম্বইয়ে জাতীয় কার্যনির্বাহী পরিষদে তাঁরা বিষয়টি আলোচনা করবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement