অতুল কুমার আনজান, ডি রাজা ও স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ভূপেশ ভবনে।—নিজস্ব চিত্র।
তারুণ্যকে প্রাধান্য দিতে সংগঠনে কিছু নীতি চালু করেছে সিপিএম। রাজনীতিতে দোসর হয়েও সংগঠনে সে পথে হাঁটতে পারল না সিপিআই!
দলের মধ্যে বিতর্ক এবং টানাপড়েনের পরে শেষ পর্যন্ত কমিটিতে থাকার জন্য নেতাদের বয়সের কোনও সীমা বাঁধা হল না সিপিআইয়ে। কানহাইয়া কুমারের মতো তরুণ সিপিআই নেতা ইতিমধ্যে প্রকাশ্যেই নেতৃত্বে স্থবিরতা কাটানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন। কলকাতায় দলের জাতীয় পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে এ বার সাংগঠনিক দশার ময়না তদন্তও হয়েছে। কিন্তু তিন দিনের বৈঠকে উচ্চ স্তরের কমিটির ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বাঁধতে মতৈক্য হয়নি। বরং, শাখা স্তরে সক্রিয়তা বাড়ানোর দিকেই এখন নজর দিতে চাইছেন সিপিআই নেতৃত্ব।
কঠিন সময়ে আরএসএস-বিজেপির ‘ফ্যাসিস্ত’ রাজনীতির মোকাবিলায় সংগঠনকে চাঙ্গা করতে শাখা স্তর থেকে জনসংযোগ এবং সদস্যপদ বাড়ানোর পাশাপাশিই দলের নেতাদের জন্য এ বার সিপিআইয়ের দাওয়াই, তাঁদের পর্যায়ক্রমে নিচু তলায় গিয়ে সংগঠনের কাজ করতে হবে। ভূপেশ ভবনে মঙ্গলবার বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা বলেছেন, ‘‘কমিউনিস্ট পার্টির মূল ভিত্তি শাখা স্তরের উপরে নির্ভর করে। তৃণমূল স্তরে সেখানেই মানুষের সঙ্গে সংযোগ হয়। শাখা স্তরকে সক্রিয় করতে হবে। আমাদের দলের সদস্য এখন ৬ লক্ষ। সেটা অন্তত ২০% বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে এগোব।’’
কিন্তু সংগঠনে তরুণ মুখকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনও সূত্র উঠে এল না কেন? রাজার বক্তব্য, ‘‘কর্পোরেট হাউসের মতো করে তো রাজনৈতিক দল চলে না! রাজনীতিতে মানুষ শেষ শক্তি দিয়েও কাজ করতে চায়। কিছু দিন আগে গুরুদাস দাশগুপ্ত প্রয়াত হয়েছেন, তিনি তো শেষ দিন পর্যন্ত দলের সঙ্গে পুরোপুরি সংযুক্ত ছিলেন।’’ দলের কেন্দ্রীয় নেতা অতুল কুমার আনজান যোগ করেন, ‘‘জয়প্রকাশ নারায়ণ ৭৪ বছর বয়সে দেশ জুড়ে একটা বড় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। নেতা উঠে আসেন আন্দোলন থেকেই। আন্দোলনের কর্মসূচিতেই গুরুত্ব দিতে হবে।’’ তবে রাজা মেনে নিয়েছেন, প্রজন্মের এবং বয়সের ব্যবধান কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠনে কিছু স্থবিরতা এনেছে।
রাজনৈতিক ভাবে সব গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির একযোগে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশলেই ফের সিলমোহর দিয়েছে সিপিআই। রাজার কথায়, ‘‘মিছিল আমরা আলাদা ভাবে করতে পারি কিন্তু আঘাতটা হানতে হবে একযোগেই!’’ পাঁচ বাম দলের কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে দেশ জুড়ে ১২ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ হবে ‘জনবিরোধী’ বাজেটের বিরুদ্ধে। গোবিন্দ পানসারের হত্যার দিন, ২০ ফেব্রুয়ারি ‘যুক্তি দিবস’ হিসেবে পালন করবে সিপিআই। ঠিক হয়েছে, মতাদর্শগত ভাবে আরএসএসের মোকাবিলায় এবং সংবিধান রক্ষার ডাক দিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি (নৌ-বিদ্রোহের দিন) থেকে ২৩ মার্চ (ভগৎ সিংহ, রাজগুরু, সুখদেবদের ফাঁসির দিন) পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। রাজা জানিয়েছেন, ভারতীয় ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের ডাকে আগামী ২০ মার্চ দিল্লিতে সমাবেশকে তাঁরা সব রকম ভাবে সমর্থন করবেন।