—ফাইল চিত্র।
করোনার প্রকোপে বিশশো বিশের গোটা উৎসব-মরসুম নিয়ন্ত্রণেই কাটাতে হয়েছে মানুষকে। এ বার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে। আবার কড়া নাড়ছে উৎসবের মরসুম। চোখ রাঙাচ্ছে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউও। এই পরিস্থিতিতে টিকাকরণের চলতি হার ভাবাচ্ছে স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞদের। দুর্গাপুজোর প্রস্তুতির ব্যাপারে রাজ্য সরকার এখনও সিদ্ধান্ত না-নিলেও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, গত বারের নিয়ন্ত্রণ বিধি এ বছর আরও কঠোর ভাবে মেনে চলা উচিত। প্রয়োজনে গতিবিধির অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে টিকাকরণ বাধ্যতামূলক করা দরকার।
গত বছর দুর্গাপুজোয় কলকাতা হাই কোর্ট কিছু বিধি নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল। সাধারণের গতিবিধিতে অনেকটাই রাশ টেনেছিল প্রশাসন। মণ্ডপের নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। সব মিলিয়ে রাজ্যে পরিস্থিতি লাগামহীন হয়ে উঠতে পারেনি। এ বারেও কোনও মামলার ভিত্তিতে বা নিজের থেকে হাই কোর্ট কিছু নির্দেশ দেয় কি না, উৎসবের ক্ষেত্রে সরকারই বা কতটা রাশ আলগা করবে— সব কিছু নিয়েই জোরদার জল্পনা সর্বস্তরে।
বিশেষজ্ঞ মহল জানাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে টিকাকরণ হয়েছে কমবেশি ৩০% মানুষের। সংখ্যার হিসেবে তা তিন কোটির কিছু বেশি। এই অবস্থায় যাঁরা দু’টি বা অন্তত প্রথম ডোজ় নিয়েছেন, স্বাভাবিক একটা আত্মবিশ্বাস থেকে তাঁরা রাস্তার বেরিয়ে পড়তে চাইবেন। ডেল্টা বা ডেল্টা প্লাস গোত্রের ভাইরাস তাঁদের আক্রমণ করলেও সে-ক্ষেত্রে উপসর্গ হয়তো তেমন জোরদার হবে না। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত ভিড় থাকলে সেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে দেরি হবে না। কারণ, অনেকেই টিকাকরণের আওতার বাইরে রয়েছেন। আবার যাঁদের টিকা হয়নি, তাঁদের ক্ষেত্রে সেই সংক্রমণ প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞ মহল। তাদের পরামর্শ, অন্তত ৭০% টিকাকরণ সম্পূর্ণ হওয়ার আগে কোনও ভাবেই নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা উচিত নয়।
“চলতি পরিস্থিতিতে টিকাকরণকে সামাজিক পাসপোর্ট হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। যাঁরা টিকা নিয়েছেন, একমাত্র তাঁরাই যাতে পুজো মণ্ডপে ঢুকতে পারেন— এমন কড়া নিয়ন্ত্রণ আনা প্রয়োজন,” বলছেন শল্যচিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার। গত বছর ‘মানবিক’ দৃষ্টিভঙ্গি’ নিয়ে মুখ না-ঢাকা মানুষজনের মধ্যে মাস্ক বিলি করেছিল পুলিশ। কিন্তু এ বছর সংক্রমণের তীব্রতা বাড়লেও মাস্কের ব্যবহার বা দূরত্ব-বিধি মান্য করার ক্ষেত্রে অনেক শিথিলতা দেখা গিয়েছে। তাই উৎসবের আবহে রাস্তা, বাস, মেট্রো— সর্বত্র বিধিপালনে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মাস্ক না-পরলে দরকারে জরিমানা আদায়ের মতো পদক্ষেপের কথা ভেবে দেখার প্রস্তাব দিচ্ছে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞ মহল।
“দ্বিতীয় ঢেউ থেকে প্রত্যেককে শিক্ষা নিতে হবে। গত বারের নিয়ন্ত্রণ বিধি আরও কঠোর ভাবে বলবৎ করার জন্য তৎপর হতে হবে প্রশাসনকে। সাধারণ মানুষকেও বুঝতে হবে, এই বিধি মানলে আখেরে প্রত্যেকের পরিবারই সুরক্ষিত থাকবে,” বলছেন সংক্রমক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্ত।
তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলা করার বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেন গ্লোবাল অ্যাডভাইজ়রি বোর্ডের সদস্যরা। উৎসব-বিধি নিয়ে সে-দিন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রশাসনিক সূত্রের খবর, শীঘ্রই এই ব্যাপারে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলবে রাজ্য সরকার।